মুখ্যমন্ত্রীর ৩ বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ডিপ্লোমা কোর্সের ভাবনার তীব্র বিরোধিতা করলেন চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনাকে ‘মানুষের সঙ্গে প্রতারণা‘ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘এই ভাবনা যার মাথায় এসেছে তিনি এই চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা করাতে যাবেন তো?’
মানসবাবু বলেন, ‘এটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে, জীবন নিয়ে খেলা। রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেদিক থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে ফন্দি ফিকির বলেই মনে হচ্ছে’।
তাঁর প্রশ্ন, ‘যারা এই কোর্সের প্রবক্তা তাঁরা তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্যে এই সমস্ত চিকিৎসকদের কাছে যাবেন তো? নাকি গ্রামের মানুষ, গরীব মানুষের সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই? তিন বছরে মডার্ন মেডিসিন আর পনেরো দিনে নার্সিং শেখা যায় নাকি’?
প্রবীণ এই চিকিৎসকের পরামর্শ, ‘বিশ্ব সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক স্বাস্থ্যেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা। সেখানে তিন বছরের কোনও চিকিৎসকের কথা সরকার বলছেন আমরা জানি না। দেশে চিকিৎসক তৈরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। তাদের অনুমতি, অনুমোদন ছাড়া কোনো রাজ্যই ইচ্ছে মতো মডার্ন মেডিসিনের কোনো কোর্স চালু করতে পারে নাকি? কে পড়াবে? কি পড়াবে? কোথায় পড়াবে’?
হিসাব কষে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি ১০০০ মানুষের জন্যে একজন চিকিৎসক থাকার কথা। দেশে এই মুহূর্তে ৫৪২টি মেডিক্যাল কলেজে মোট এমবিবিএস সিট প্রায় ৮২ হাজার। গ্রাম শহরের প্রভেদ থাকলেও আমরা প্রায় সেই অনুপাতে পৌঁছে গেছি। আমাদের রাজ্যেও মডার্ন মেডিসিনে সিটের সংখ্যা প্রায় ৪,৮০০'।
রাজ্য সরকারকে তাঁর কটাক্ষ, 'রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল ভাড়া দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের মেডিক্যাল কলেজ খোলার ব্যবস্থা করে দেওয়া চলছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, নিয়োগ, প্রমোশন, বদলিতে নানা অস্বচ্ছতা, স্বজনপোষনের জন্যে সরকারি চাকরিতে যোগদান কিছু অনীহা থাকলেও, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্যে মাঝে মধ্যেই তাঁরা রাস্তাতে নামছেন। ডেন্টাল সার্ভিসে বিগত ৭ বছর নিয়োগ বন্ধ ছিল। তাহলে চিকিৎসকের অভাব কোথায়? এই পরিকল্পনার পেছনে গভীর কোনো উদ্দ্যেশ্য আছে বলে মনে হয়। আসল সমস্যায় নজর না দিয়ে, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আমরা কোনো ভাবেই মেনে নেবো না’।