চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে আছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। এখন তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে পিএইচডি করছেন। কিন্তু গতকাল থেকে আবার অনশন শুরু করেছেন অর্ণব বলে সূত্রের খবর। আর এই অনশন করার জন্য বুধবার থেকে ওআরএস ছাড়া নাকি কিছুই মুখে তোলেননি এই মাওবাদী নেতা। এই পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আগেই ধন্যবাদ জানান তিনি। কিন্তু এবার ৭৬ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে একদিনের প্যারোল মুক্তি চেয়েছিলেন অর্ণব। যদিও তাঁকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই অনশন শুরু করেছেন তিনি।
এদিকে খড়গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র তথা মাওবাদী নেতা অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী) দলের রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই হিংসার রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ অর্ণব দামকে গ্রেফতার করে। তখন থেকেই জেলবন্দি তিনি। ২০১০ শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় ২৪ জন জওয়ান শহিদ হন। এই হামলার নেতৃত্ব দেন অর্ণব বলে অভিযোগ। এছাড়াও ৩১টি গুরুতর মামলা ছিল অর্ণবের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে বিরোধিতায় সিপিএম–কংগ্রেস, পাত্তা দিচ্ছে না বিজেপি
অন্যদিকে এই বন্দি অবস্থাতেই ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করতে চাইলে আদালত তাঁকে অনুমতি দেয়। তখন থেকে জেলেই পড়াশোনায় মন দিয়েছিলেন অর্ণব দাম। তারপর মেদিনীপুর সংশোধনাগার থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে এসে ইগনু থেকে তিনি ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। দু’টিতেই ফার্স্ট ক্লাস পান এই মাওবাদী নেতা। ২০১৮ সালে স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটি টেস্টও পাশ করেন। এখন তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন। গত ২৬ জুন পুলিশের পাহারায় ইন্টারভিউ দিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যান অর্ণব। আর ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। আর ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম হন অর্ণব দাম। শুরু হয় পিএইচডি পড়াশোনা।
এছাড়া অর্ণবের পিএইচডি করার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই যখন তাঁর ‘মেধা’ নিয়ে বিস্তর চর্চা হচ্ছিল তখন অর্ণবের হাতে নিহত ভুগোল শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুর মা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর ৩৩ বছরের তরতাজা ছেলে নির্দোষ ছিল। তারপরেও তাঁকে খুন হতে হয়েছিল। চিঠিতে লিখেছিলেন আবেগতাড়িত মা। সেখানে লেখেন, ‘কেমন করে ভুলি যে, এই হন্তারকই কথা দিয়েছিল ছেলেকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে নিরীহ সৌম্যর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল নির্মমভাবে। আজ সে বিপ্লবী, মহান, সরস্বতীর উপাসক হিসেবে সমাদৃত।’