হাসপাতালে প্রসবের পর প্রসূতি এবং সদ্যোজাতের মৃত্যু রুখতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরাও বিভিন্ন বিভিন্ন সময় দাবি করে থাকেন, বাংলায় প্রসূতি মৃত্যুর হার কমেছে। কিন্তু, গত এক বছরে রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা দেখে কার্যত রাতের ঘুম উড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে রাজ্যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। আর তার মধ্যে বহু প্রসূতি নাবালিকা। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান বলছে প্রসূতি মৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য মিশনের টাকা দেয়নি কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে প্রসূতির মৃত্যু বাড়ছে
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যক প্রসূতি মারা গিয়েছেন। এরমধ্যে অনেকেই মারা গিয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে। প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলকাতায়। গত একবছরে কলকাতায় ২০৪ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। সেখানে ১৬২ জন, পূর্ব বর্ধমানে ৭৯ জন এবং মালদায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শহরের হাসপাতালগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসূতি মারা গিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এছাড়াও আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতার অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল যেমন এসএসকেএমও অনেক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। আধিকারিকদের বক্তব্য, যে সমস্ত প্রসূতি সরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কারণ তাদের বাড়ির লোকজন প্রসব যন্ত্রণা এড়াতে চাইছেন এছাড়াও জেলা থেকে বহু প্রসূতিকে পাঠানো হচ্ছে কলকাতায়। যার ফলে সময় নষ্ট হচ্ছে এবং অবস্থা জটিল হচ্ছে। ফলে কলকাতায় এসে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। সেই কারণে সংখ্যাটা বেশি।
আধিকারিকরা জানান, সম্প্রতি হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালে কয়েকজন প্রসূতির অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি চার জনকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পাঠানো হয়। এর পাশাপাশি নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যাও বেড়েছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অস্ত্রোপচারের পর প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তা থেকে কিডনি যকৃত বিকল হয়ে অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে পড়ছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তাহলে কি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ঘাটতি রয়েছে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এনিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিজার নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।