তিনদিনের মধ্যেই কলকাতা পুরনিগমের অধীনে কর্মরত ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হবে। শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) কলকাতা পুরনিগমের অধিবেশন চলাকালীন একথা জানান শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। অর্থাৎ - সেই অনুসারে, আগামী সপ্তাহের (২৪ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহ) প্রথমার্ধের মধ্য়েই বকেয়া মজুরি পেয়ে যাবেন ১০০ দিনের কাজ করা ওই শ্রমিকরা।
ঘটনা প্রসঙ্গ জানা গিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই কলকাতা পুরনিগমের অধীনে কাজ করা ১০০ দিনের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি দেওয়া বন্ধ করে দেয় পুর কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত - অর্থাৎ - টানা তিনমাস ধরে কোনও মজুরিই পাননি ওই অস্থায়ী শ্রমিকরা।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) এই বিষয়টি নিয়ে উত্তাল হয় কলকাতা পুরনিগমের অধিবেশন। ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন শ্রমিকদের মেটানো হচ্ছে না, কেন তিনমাস ধরে সেই টাকা আটকে রাখা হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিআই(এম) কাউন্সিলর নন্দিতা রায় এবং বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত।
এক্ষেত্রে বাম-বিজেপি এক সুরে পুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা শুরু করে এবং মেয়রের কাছে অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবি জানায়। নন্দিতা রায় তাঁর বক্তব্যে জানান, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেন, তাঁরা এমনিতেই সামান্য পরিমাণ টাকা মজুরি হিসাবে পান। সেটাও যদি তিনমাস ধরে বন্ধ রাখা হয়, তাহলে তাঁরা কীভাবে সংসার টানবেন?
নন্দিতা আরও বলেন, ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকরা সেই অর্থে কোনও ছুটি পান না। তাঁদের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। এটা স্থায়ী চাকরির মতো কোনও মাসিক ব্যবস্থা নয়। তা সত্ত্বেও যদি ওই শ্রমিকদের স্বার্থে পুর কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দেন, তাহলে ১০০ দিনের কাজ করা ওই শ্রমিকরা উপকৃত হবেন।
এই ইস্যু নিয়ে হট্টগোলের মধ্যেই বলতে ওঠেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, সমস্যা যা ছিল মিটে গিয়েছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই অর্থ দফতরকে গোটা ঘটনা জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠির জবাব এসেছে এবং ১০০ দিনের শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর জন্য টাকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরপরই মেয়র জানান, যেহেতু আর্থিক সমস্যা মিটে গিয়েছে, তাই ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা আর বকেয়া রাখা হবে না। সেই টাকা আগামী তিনদিনের মধ্যেই মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে, কলকাতা পুরনিগমের কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'শ্রমিকরা যদি কাজে যোগ না দেন, তাহলে আমাদের পক্ষে শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই কঠিন।
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকরাই মূলত রাস্তায় সাফাইকর্মীর কাজ করেন। নগরবাসীর বাড়ির আবর্জনাও পরিষ্কার করেন এই সাফাইকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এই অবস্থায় যদি সেই শ্রমিকরাই তাঁদের প্রাপ্য মজুরি না পান, তাহলে যেকোনও সময় পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অবশেষে কলকাতার পুরনিগমের অধীনস্ত ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর ব্যবস্থা হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ।