পাতালপথে এসপ্ল্যানেড–শিয়ালদাকে জুড়তে গিয়ে বারবার বিপত্তি হয়েছে বউবাজারে। কারণ সেখানকার মাটির চরিত্র এই কাজের চাপ নিতে পারছে না। মাটির তলায় কাজ করতে গেলেই দুর্গা পিতুরি লেন, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরছে। সুতরাং এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে নয়া সংকট। বউবাজার এলাকার টানেলের ক্রস প্যাসেজ তৈরি করতে বেঁকে বসেছে নির্মাণকারী বেসরকারি এজেন্সি। তাই দেশের প্রথম নদীর তলা দিয়ে শুরু হতে চলা এই মেট্রো প্রকল্পে নিয়ে অনিশ্চিয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জট কাটাতে পথে নামলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? এবার কলকাতা–হাওড়া সংযোগকারী এই মেট্রো প্রকল্পের জট মুক্ত করতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এলেন ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প পরিদর্শন করতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি পরিদর্শন করেন বলে সূত্রের খবর। এদিন হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রলিতে চেপে মহাকরণ স্টেশন হয়ে এসপ্ল্যানেডে পৌঁছন তিনি। এভাবেই তিনি পাতাল পথে মেট্রো রুটের সার্বিক কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। এমনকী জট কাটাতে মেট্রো কর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
ঠিক কী বলেছেন মেয়র? বউবাজার ও নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে মেট্রোর ক্রস প্যাসেজ বাহির পথ তৈরি করতে প্রয়োজন জমির। তাছাড়া সুড়ঙ্গের কাজ বন্ধ। এমনকী নির্মাণকারী সংস্থা আইটিডি জানিয়ে দিয়েছে, বউবাজারে মাটির যা চরিত্র তাতে আর ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা সম্ভব নয়। এবার রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভার সার্বিক সাহায্য চাইছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমরা চাই গোটা রাজ্যবাসীর স্বার্থে দ্রুত এই মেট্রো রুট চালু হোক। সরেজমিনে হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ট্রলি চেপে পাতাল পথ ঘুরে দেখেছি। বউবাজার ছাড়া অন্যান্য জায়গায় কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। বউবাজারের জট কাটাতে মেট্রোকে সবরকম সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার।’
আর কী জানা যাচ্ছে? পরিকল্পনা ছিল, শিয়ালদা থেকে এসপ্ল্যানেড—এই আড়াই কিলোমিটার পাতালপথের মধ্যে পূর্ব–পশ্চিমমুখী টানেল কেটে মোট সাতটি ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে আপদকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনা যাবে। আপাতত তিনটির কাজ শেষ। তবে অতীত বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে আর ক্রস প্যাসেজ তৈরি করতে নারাজ আইটিডি। এই পরিস্থিতি নিয়ে মেয়র বলেন, ‘শহর ও শহরতলির বুকে চলতে থাকা বিবিধ মেট্রো প্রকল্পের জন্য রাজ্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছেড়ে দিয়েছে। রাজ্যবাসীকে সব থেকে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা সচেষ্ট।’ বউবাজারের ক্ষত সারাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এবার মাঠে নামলেন মেয়র।