অনেক সময়ে পেশার খাতিরে আমাদের অন্য কাজ করতে হয়। কিন্তু ভিতরে লুকিয়ে থাকে অপর কোনও সত্ত্বা। সেই সত্ত্বা হতে পারে একজন দায়িত্ববান শিক্ষকের। আবার কোনও স্নেহময় পিতাও লুকিয়ে থাকতে পারে কারও অন্তরে।
রাশভারী ইউনিফর্ম, বুলেটের গমগমে আওয়াজের নিচেও ওঁদের একটা পরিচয়, একটা সত্ত্বা আছে। প্রমাণ দিলেন কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ। সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের এই পুলিশকর্মী নিজের দায়িত্ব তো পালন করেনই। তার পাশাপাশি এক দায়িত্ববান শিক্ষকেরও ভূমিকা পালন করেন।
ডিউটির চাপ, উপরওয়ালার নির্দেশ এই সবকিছুর ফাঁকেই রোজ কিছুটা সময় বের করেন নেন প্রকাশবাবু। তারপর পৌঁছে যান বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে। ওদিকেই মাঝে মাঝে ডিউটি পরে তাঁর। সেখানেই রাস্তার ধারে, একটি গাছ তলায় গিয়ে লাল বুলেটটা দাঁড় করান।
সেখানেই ফুটপাথে ত্রিপল পেতে বই খুলে বসে একটি ছোট্ট ছেলে। দু'চোখ ভরা স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতেই সাহায্য করছেন সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ।
গৃহহীন ছেলেটির মা একটি ছোট খাবারের স্টলে কাজ করেন। সামান্য আয়। কিন্তু তা থেকে বাঁচিয়েই সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। ক্লাস থ্রিতে পড়ে সে। বই-খাতা, পেন-পেনসিলেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তার মা।
এলাকায় ডিউটি থাকলেই গাছতলায় চলে আসেন প্রকাশ ঘোষ। ছেলেটিও সঙ্গে সঙ্গে আগের দিনের হোমওয়ার্ক বের করে দেয়। ভুল-চুক শুধরে দেন তিনি। সিলেবাস কত দূর এগোল খোঁজ নেন। নতুন হোমওয়ার্কও দেওয়া হয়। তারপর আবার সেই লাল বুলেটে করে ডিউটিতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষের এই অনবদ্য কাহিনীই তুলে ধরেছেন সাংবাদিক অর্ণবাংশু নিয়োগী। টুইটারে প্রকাশবাবু ও তাঁর ছাত্রের ছবি শেয়ার করেছেন অর্ণবাংশু।
খোলা আকাশের নিচেও থাকে অনেক অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারই দূর করেন প্রকাশবাবুর মতো মানুষরা। আর তাই, আজও স্বপ্ন দেখে কলকাতা।
কলকাতার এই স্বপ্নিল কাহিনি আপনার কেমন লাগল? কমেন্টে জানান আপনার ভাবনা।