বহিরাগত তত্ত্বে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার কৌশল নিল তৃণমূল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে ফের এই ইস্যুতেই বিজেপিকে বিঁধলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তৃণমূল নেতার কথায়, ত্রিপুরী কংগ্রেসের পর যা সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল তারই কি পুনরাবৃত্তি মমতার সঙ্গে হয়নি? মমতাকে সুভাষের মতো লড়াই করতে হয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করতে হয়েছে, তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পশ্চিম ও উত্তর ভারত থেকে লোক পাঠাতে হচ্ছে। আমাদের মাথার উপরে অন্য রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী বসানো হবে? অন্য রাজ্য থেকে রাজনৈতিক নেতা বসানো হবে?
একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি’র রণকৌশল তৈরির মূল দায়িত্ব যে পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কেউই এই রাজ্যের নন। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিজেপি’র উদ্দেশ্যে লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে চলেছে রাজ্যের শাসকদল। মন্ত্রী শশী পাঁজা, সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পর এদিন একই বিষয়ের উপর সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘বাংলাকে না বোঝা, বাংলার সংস্কৃতিকে না বোঝা, সব থেকে বড় কথা বাংলার নাড়ি না বোঝা কিছু বহিরাগত লোকজনকে দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র পক্ষে থেকে রাজ্যে এসে হঠাৎ ঘোরাঘুরি করছে।’
সুভাষচন্দ্র বসু যেভাবে রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন, একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি ব্রাত্যবাবুর। তাঁর কথায়, ৩৯ সালে সেই যে সুভাষ বসু হেরে গেলেন, উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয়রা চটে গেল। আপনারা ভেবে দেখুন ১৯১৫ সালে গান্ধী এলেন। তার আগে পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাঙালির হাতে। ১৯৩৯ সালে হারলেন সুভাষ। নানাভাবে সুভাষকে কোণঠাসা করা হল। ১৯৪৪ সালে তাইহোকু ঘটল। ভারতের রাজনীতি থেকে চলে যেতে হয়েছিল সুভাষকে। তার হুবহু পুনরাবৃত্তি ঘটল ৫০ বছর পরে। মমতাকে চলে যেতে হল না। যেহেতু মমতাকে উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়নি। সুভাষ বসু আলাদা দল গঠন করেছিলেন। মমতাকে সুভাষের মতো লড়াই করতে হয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করতে হয়েছে, তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পশ্চিম ও উত্তর ভারত থেকে এখন লোক পাঠানো হচ্ছে।
বিজেপি’র বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘বাংলার মানুষকে না জানা, রবীন্দ্রনাথ, বিরসা মুন্ডাকে না জানা এই ধরনের লোকজন বাংলা এবং বাঙালিকে নানাভাবে ছোট করছেন। এই বহিরাগত তাণ্ডব বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার একটা পরম্পরা, একটা সম্প্রসারণ।’ মার্কিন মন্ত্রিসভায় বাঙালির অন্তর্ভূক্তির প্রসঙ্গ টেনে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যাবিনেটে বাঙালিকে রাখছেন। গত ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন বিশ্ব বাংলা। বাংলার মুখ দিয়ে বিশ্বকে দেখা। বিশ্বকে দিয়ে বাংলাকে ভাবা। সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা নয়। আন্তর্জাতিক–ক্ষেত্রে তুলে ধরা বাঙালিকে। বাইডেনের ক্যাবিনেটে বাঙালি মন্ত্রী থাকার মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। বাইডেন মনে করছেন, গবেষক অরুণ মজুমদার যোগ্য। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৭ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার থাকা সত্ত্বেও বাঙালি মন্ত্রী নেই। গত ৭ বছর ধরে হাফ প্যান্ট পরা মন্ত্রীদের রেখে দিয়েছেন।’
এদিন মন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১১ সালে মমতার মন্ত্রিসভায় মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। মমতার মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছিল রচপাল সিংকে। কিন্তু অনুরূপভাবে যে বাঙালি উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাতে থাকেন, তাঁদের কেন মন্ত্রিসভা ঠাঁই দেওয়া হয় না? মমতার দয়ায় অর্জুন সিং বিধায়ক হয়েছিলেন, তাহলে গুজরাত থেকে কোনও অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় হন না কেন? উত্তরপ্রদেশ থেকে কেন একটা অর্জুন রায় হবেন না। আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। তৃণমূলের বহিরাগত তকমা নিয়ে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘আমাদের সর্বভারতীয় নেতারা বারবার আসবেন। নির্বাচনী প্রস্তুতি দেখে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেবেন। তাঁরা বাংলার লোকেদের ভরসাই করেন না। ওরা তো বিহার থেকে বুদ্ধিজীবী এনে জেতার চেষ্টা করছে। পিকে কে? তাঁর সঙ্গে বাংলার কী সম্পর্ক?’