রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর, কলকাতা হাইকোর্ট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইএসআই হাসপাতাল থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পাড়ার ক্লাব - করোনাকালে যারা রাজ্যের পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে বাসভাড়া নিয়েছিল, আজ পর্যন্ত সেই ভাড়া মেটায়নি তারা! যা নিয়ে উদ্বেগ্ন দফতরের আধিকারিকরা।
তাঁদের বক্তব্য, যেখানে পরিবহণ নিগমের 'ভাঁড়ে মা ভবানী' দশা, সেখানে করোনাকালের বাসভাড়া বাবদ বকেয়া পড়ে রয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা!
এই টাকা পেলে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ডিপোর অচল, অকেজো হয়ে পড়ে থাকা বাসগুলিকে অন্তত রাস্তায় নামানো যেত। তাতে দফতরের আয় যেমন কিছুটা বাড়ত, আমজনতা এবং নিত্যযাত্রীরাও উপকৃত হতেন।
সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে লেখালিখি শুরু হলেও ধার-বাকি রাখা সরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠানগুলির তাতে তেমন কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ উঠছে।
এমনকী, এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলিকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। একমাত্র রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরই করোনার সময় ভাড়া নেওয়া বাসের টাকা পরিবহণ দফতরকে পুরোপুরি মিটিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাকালে যখন দেশজুড় লকডাউন ঘোষণা ও কার্যকর করা হয়, তখনও জরুরি বিভিন্ন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী ও আধিকারিকদের নিয়মিত কাজ করে যেতে হয়েছে। বরং, সেই সময় তাঁদের কাজ বেড়েছে বই কমেনি।
সেই সময় পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে বাসভাড়া নিয়েই জরুরি পরিষেবার কর্মী ও আধিকারিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁদের অফিসে আনা, বাড়িতে ফেরত পাঠানো - সবই করা হত পরিবহণ দফতরের বাসে। এমনকী, পরিবহণ দফতর নিজের খরচেই বাসের তেলও ভরানোর ব্যবস্থা করত।
এই সমস্ত কাজের খরচ বাবদ এখনও পর্যন্ত পরিবহণ দফতরের পাওনা রয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে কেবলমাত্র কলকাতা হাইকোর্টের তরফেই বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা!
এছাড়াও বাসের ভাড়া বাকি রাখা সরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে - দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, হিডকো, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ, কলকাতা পুরনিগম, পঞ্চায়েত দফতর, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতাল, কলকাতা দক্ষিণ নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়, মানিকতলা ইএসআই, আইসিডিএস দফতর, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, এসএসকেএম হাসপাতাল প্রভৃতি।
তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে বাসের ভাড়া বকেয়া রেখেছে ২০টিরও বেশি সরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠান! পরিবহণ দফতরের কর্তারা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব এই টাকা মেটানো হলে তাতে পরিবহণ নিগমের কিছুটা সুরাহা হবে। কারণ, টাকার অভাবে পরিষেবা প্রদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এমনকী, সরকারি বাসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি কেনার খরচটুকুও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না!