পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চিৎপুরের এক অভিজাত আবাসনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে মরণঝাঁপ দেয় হুগলির এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুষ্কৃতী আবদুল হুসেনের। ওই ফ্ল্যাটে শনিবার সকাল থেকে মদের আসর বসায় আবদুল। সঙ্গী হিসেবে ছিল কনস্টেবল পদে নিযুক্ত এক পুলিশকর্মী এবং নিষিদ্ধপল্লী থেকে আসা দুই যুবতী। এই তিনজনের পাশাপাশি এক রান্নার লোক ও গাড়ির চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে চিৎপুর থানার পুলিশ ও লালবাজার হোমিসাইড শাখার তদন্তকারী আধিকারিকরা।
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় ফরেনসিক দল। সেখান থেকে ভাঙা মদের বোতল, কাঁচ, রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেনসিক আধিকারিকরা। এদিকে, তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার গভীর রাতে চিৎপুরের যে ফ্ল্যাটকে ঘিরে এত সব কাণ্ড ঘটেছে সেটির মালিক মালদার এক তৃণমূল নেতা। যদিও তাঁর স্ত্রী মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ পায়েল খাতুন এ ঘটনার ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। তিনি এদিন বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে ওই ফ্ল্যাটটি রয়েছে। আমি এখন শিলিগুড়িতে রয়েছি। তাই ওখানে কী হয়েছে জানি না।’
শনিবার রাতে চিৎপুরের ওই অভিজাত আবাসনে কী হয়েছিল? আবাসনের নিরাপত্তরক্ষী ও বাসিন্দাদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, যাঁর নামে এই ফ্ল্যাট সেই তৃণমূল নেতা শুক্রবার রাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। শনিবার সেখানে আসে হুগলির দাগী আসামী আবদুল হুসেন। এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে সকাল থেকে মদের আসরে বসে আবদুল। দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে নিষিদ্ধপল্লী থেকে দুই যৌনকর্মীকে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের সঙ্গে একজন রান্নার লোক ও গাড়ির চালকও ছিল।
রাতে হঠাৎ ওই ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার, ভাঙচুরের আওয়াজ পান ফ্ল্যাটের নিরাপত্তারক্ষী ও অন্য আবাসিকরা। ততক্ষণে জখম অবস্থায় ফ্ল্যাটের বাইরে চলে এসেছেন নিষিদ্ধপল্লী থেকে আসা ওই দুই যুবতী। তাঁদের অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের সঙ্গে বচসা, পরে মারধর করতে শুরু করে আবদুল। তাঁদের মধ্যে একজনকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় কাঁচের গ্লাসও। সময় নষ্ট না করে পুলিশকে খবর দেয় আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তাঁরা ফ্ল্যাটের ভেতরে গিয়ে দেখেন, চারিদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কাঁচ, মদের বোতল। রক্ত ভেসে যাচ্ছে ফ্ল্যাটের মেঝে।
ফ্ল্যাটে থাকা সকলকে সেখান থেকে বের করে আনলেও আবদুলের দেখা পাওয়া যায়নি। তখন পুলিশ লক্ষ্য করে যে একটি ঘর ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। আবদুলের খোঁজ শুরু হলে দেখা যায় আবাসনের সামনে ছোট একটা মাঠে পড়ে রয়েছে তাঁর দেহ। যে ঘরটি বন্ধ ছিল তার বারান্দার সঙ্গে ঝুলছে দড়ি ও বিছানার চাদর। যা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, পুলিশ আসছে দেখে ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপ দেয় আবদুল। নীচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, এই আবদুল হুসেনের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি–সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে হুগলির বিভিন্ন থানায়। বর্তমানে নিখোঁজ ছিল সে। বেশ কয়েকদিন ধরে পুলিশ তার খোঁজও করছিল।