রাজ্য–রাজনীতিতে উপনির্বাচনের প্রাক্কালে নয়া সমীকরণ দেখা দিয়েছে। আমডাঙার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তার এখন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রশাসনিক পদে আসীন হলেন। আর তাতেই ঢি–ঢি পড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে সিপিএম ভয় পাচ্ছে। আর বিজেপি এই মাস্টারস্ট্রোক দেখে কার্যত দিশেহারা। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এমন পদক্ষেপ কেন করল? তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। যে সিপিএমকে সরিয়ে আজ বাংলার মসনদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসীন সেখানে বামফ্রন্ট সরকারের জমানার মন্ত্রীকে প্রশাসনিক পদে বসানো এককথায় নজিরবিহীন। আর এটা দেখেই কড়া বার্তা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সাত্তার সাহেব কিন্তু এখনই তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা হাতে তোলেননি। তার পরও তাঁকে প্রশাসনিক পদে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে আবদুস সাত্তারকে নিয়োগ করল নবান্ন। তার সঙ্গেই রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাস শিক্ষা দফতরের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা হয়েছে। এই পদ হচ্ছে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমতুল মর্যাদা। এখন থেকে তা পাবেন আবদুস সাত্তার। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে কড়া বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য তা হল—আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ঠিক তার প্রাক্কালে আবদুস সাত্তারকে নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে নৈহাটি একটি চর্চিত কেন্দ্র। কারণ এখানে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি। নকশাল দল সিপিআই (এমএল) লিবারেশনকে ছেড়ে দিয়েছে। আর এই বিধানসভার প্রায় গায়ে লাগোয়া এলাকা হল আমডাঙা। যেখান থেকে জিতে আগে বিধায়ক হতেন আবদুস সাত্তার। তাই এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘ফিশ ফ্রাই রাজনীতির মতো গন্ধ আসছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছিল সনাতনী হিন্দু ভোটকে ভাগ করে এবং ভাতা দিয়ে।’
আরও পড়ুন: বামফ্রন্টের নাম কি বদল হতে চলেছে? উপনির্বাচনের প্রাক্কালে চাপ বাড়াল নকশালরা
এই কথা লেখার অর্থ হচ্ছে, আসন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি নিজেদের ফল নিয়ে এখন থেকেই সন্দিহান। আবদুস সাত্তার রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক পদে থাকার অর্থ হচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী এবং মজবুত হওয়া। সিপিএম এই নেতাকে সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। উপযুক্ত সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তা খেলে দিল। এটা বুঝতে পেরেই শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসতে আবদুস সাত্তারকে পুরষ্কৃত করা হল। আরজি কাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেটাকে বেলাইন করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন পদক্ষেপ করেছেন।’
এছাড়া আবদুস সাত্তারের মতো তরুপের তাসকে আস্তিন থেকে বের করা নিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়েছে বিজেপি। কারণ শুধু এই উপনির্বাচনের বৈতরণী পার করার জন্য আবদুস সাত্তারকে আনা হয়নি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে শুভেন্দু অধিকারীর মতে, ‘বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তাকে অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডি জোটের প্রাক্তন সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাস শিক্ষা দফতরের মন্ত্রীকে নয়া মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়ে এলেন। টিএমসি—তৃণমূল মার্কসিস্ট কম্বো।’