জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন–আন্দোলন উঠে গিয়েছে। কিন্তু গত ৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় পাশ হয়েছে রাজ্য সরকারের ‘অপরাজিতা বিল’। এখন দেড় মাস পার হয়ে গেলেও বিলটি নিয়ে রাজভবন থেকে কোনও সাড়াশব্দ আসেনি। রাজভবনের পক্ষ থেকে বিধানসভার সচিবালয়ে এখনও কোনও বার্তা আসেনি। এবার এই বিলটির বিষয়ে রাজভবন সদর্থক পদক্ষেপ করুক বলে চাপ বাড়াল রাজ্য সরকার। আর রাজভবনকে তাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাঁচবছর ধরে রাজভবনে পড়ে আছে গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল। তাতে সবুজ সংকেত কবে মিলবে? প্রশ্ন উঠছে। একইসঙ্গে অপরাজিতা বিল নিয়েও প্রশ্ন তুলছে রাজ্য সরকার।
ধর্ষকদের কঠিনতম শাস্তি দিতেই ‘অপরাজিতা’ বিল আনে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় তা পাশ করিয়ে নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিলে সর্বোচ্চ শাস্তি এবং বিচার দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনায় ২১ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত ১৫ দিন নিয়ে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান লেখা আছে ওই বিলে। এই বিলটি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপি উভয়পক্ষের সম্মতিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় পাশ হয়। কিন্তু তারপর রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজভবন থেকে সাড়া মেলে না বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে বাংলা, দ্রোহকালে মিলল কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি
এই নীরবতা দেখে এবার চাপ বাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী রাজ্যের হাতে যে ক্ষমতা ন্যস্ত রয়েছে সেটার উপর ভিত্তি করেই অপরাজিতা বিল আনে রাজ্য সরকার। এই বিলটি পাশ হওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে গোটা দেশে। কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে ‘অপরাজিতা’ বিলকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় দোষীর দ্রুত শাস্তি ও ফাঁসি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে বিল এনেছে সেটাকে স্বাগত জানাচ্ছি। দোষীর ফাঁসি আমিও চাই।’ রবিবার রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘অপরাজিতা বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে রাজভবনে গিয়েছে। কিন্তু ওই বিলটি নিয়ে এখন বিধানসভার কাছে কোনও খবর নেই। রাজ্যপালের সম্মতি দিতে বাধা কোথায়?’
এই বিলটি দেশের অনেকে সম্মতি দেওয়ায় তা ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে। রাজ্যপাল এই বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠালে আর তাতে রাষ্ট্রপতি সই করলে ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি রুখে দেওয়া যাবে। আগে এই বিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘রাজ্যপাল দ্রুত সম্মতি দিন। এই বিল ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগামী দিনে এটি মডেল হবে দেশের সব রাজ্যের কাছে।’ ২০১৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সরকার বিধানসভায় পাশ করেছিল গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল। দেশের প্রথম রাজ্য যারা এই কাজ করেছিল। তবে পাঁচ বছর কেটে গেলেও বিলটিতে সম্মতি দেয়নি রাজভবন। রাজ্যপালের কাছেই পড়ে আছে।