রাজ্য–রাজনীতিতে কিছুদিন আগে বড় খবর হয়ে দাঁড়িয়েছিল ট্যাবের টাকা প্রতারণা করার ঘটনা। তাতে বেশ কয়েকজন প্রতারক ধরাও পড়ে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এই সরকারি অর্থ অপচয় এবং অন্যত্র চলে যাওয়ার পিছনে রয়েছে কিছু সরকারি অফিসার এবং কর্মী বলে অভিযোগ। তাই এমন পরিস্থিতিতে কঠিন সংস্কার বা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিচ্ছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারি অফিসারদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যে অ্যাপের মাধ্যমে সরকারি অর্থ খরচের লেনদেনে স্বচ্ছতা থাকবে। আর সবটা দেখতে পাওয়া যাবে।
এভাবেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১০ ডিসেম্বর অর্থ দফতরের অডিট ব্রাঞ্চ থেকে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এই অ্যাপ তৈরি করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার এবং অপচয় বন্ধ করা। এমনকী বলা যেতে পারে চুরি বা লিকেজ বন্ধ করা। একদা এমন সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার। তখন ওয়েস্ট বেঙ্গল ফাইনান্সিয়াল রিস্ট্রাকচার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করেছিলেন তিনি। আর এই সমীক্ষার কাজ করেছিল প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপার্স। এই আধুনিকীকরণ ব্যবস্থা করার জন্য ঋণ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক।
আরও পড়ুন: মেট্রো রেলের কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচনে উড়ল লাল পতাকা, হারল বিজেপি-কংগ্রেস-তৃণমূল
রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, স্বচ্ছতা নিয়ে পরিষেবা দেওয়া এবং হিসাব রাখার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার চরম আধুনিক পথে হাঁটছেন। যেটা মাইলফলকও হতে পারে। সরকারি সম্পত্তির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দুর্নীতির নানা অভিযোগ আগে উঠেছে। সেই দুর্নীতি ঠেকাতেই এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলতেই এই অ্যাপ নিয়ে আসা হচ্ছে। তাতে অর্থ তছরূপ করার বিষয়টিও রোখা যাবে। কারণ তাতে জিপিএস ট্যাগ করে দেখাতে হবে কোন সম্পত্তির মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। সেই সম্পত্তির ছবিও বাধ্যতামূলকভাবে তুলে পাঠাতে হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
সামাজিক প্রকল্পের টাকা অন্যত্র চলে যাওয়া নিয়ে বিস্তর সমস্যায় পড়তে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। কেউ কেউ ট্যাব কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি বলে চাউর করে দিয়েছিলেন। এমনকী অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পেও দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছিল। এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কোনটা দুধ আর কোনটা জল পরিষ্কার হয়ে যাবে। নিচুতলার অফিসার থেকে জেলাশাসক পর্যন্ত এই অ্যাপের মাধ্যমে কানেকটেড থাকবেন। অ্যাপেই সমস্ত তথ্য আপলোড করতে হবে। ফলে কেউ দায় এড়াতে পারবেন না। সম্প্রতি নবান্নে এক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিকে কেউ যেন নিজের জমিদারি না ভাবেন। এটা জনগণের অর্থ। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতেই হবে।’