আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন করে ধর্ষণ করার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য–রাজনীতি। বাংলার পুলিশের উপর রোষ নেমে এসেছিল। এমনকী আদালতের পক্ষ থেকেও কলকাতা পুলিশকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল। যদিও কলকাতা পুলিশই মূল অপরাধী সঞ্জয় রায়কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছিল। এখন সিবিআই তদন্ত করে একই তথ্য দিয়েছে। কিন্তু এই একটা ঘটনা গোটা পুলিশমহলকে বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। সঠিক তদন্ত করার পরও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার, জুনিয়র ডাক্তাররা। এবার রাজ্যজুড়ে ‘আইনি পরামর্শদাতা’ নিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পরে গত তিন মাসে রাজ্যের নানা প্রান্তে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকার কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকে আরও সজাগ হয়েছে পুলিশ। এমনকী ভীষণভাবে সতর্ক থাকছে পুলিশ। পুলিশের এই নিখুঁত পদক্ষেপ কাউকে আঙুল তোলার সুযোগ দেয়নি। দুঁদে আইনজীবীদের পরামর্শ তাঁদের কাজে এসেছে। তাই এবার রাজ্যের প্রত্যেকটি মহকুমায় পুলিশের জন্য একজন করে ‘আইনি পরামর্শদাতা’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তী প্রয়াত, মেয়র থাকাকালীন উন্নয়ন হাওড়ায়
এই আইনি পরামর্শদাতারা প্রত্যেক ইস্যু নিয়ে পুলিশকে সঠিক আইনি পথের দিশা দেখাবেন। যার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে কোনও সমস্যা হব না। এমনকী আদালতে এই আইনি পরামর্শদাতারাই পুলিশের পক্ষে সওয়াল করবে। সমস্ত নথি সরবরাহ করবে। যাতে পুলিশের বদনাম না হয়। তাই দ্রুত রাজ্যের ৯৯টি মহকুমায় পুলিশকে আইনি সাহায্য দেওয়ার জন্য একজন করে পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হবে। তার জন্য ওই আইনজীবীদের যথেষ্ট যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যা বিস্তারিতভাবে জানানো হবে কদিন পরে। তবে রাজ্যের এই উদ্যোগকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর পুলিশেরও উপকার হবে।
লালবাজার সূত্রে খবর, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তদন্ত যে সঠিক পথেই করা হয়েছিল ৭৭ দিন পর আদালতে সিবিআইয়ের জমা দেওয়া চার্জশিটে তার প্রমাণ মিলেছে। তবে এফআইআর দায়ের করা থেকে শুরু করে সিজার লিস্ট তৈরি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে আইনি নথি তৈরিতে পুলিশের কিছু ত্রুটি দেখা গিয়েছিল। তাই বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পুলিশ। আইনি পরামর্শদাতা এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। জয়নগরে নাবালিকা ধর্ষণ, কৃষ্ণনগরে তরুণীর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন, ডোমকলে শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করেছিল। আদালতও হস্তক্ষেপ করেনি। তাই এবার প্রত্যেকটি মহকুমায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনি পরামর্শদাতা নিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।