আবারও 'দেশের উন্নয়নের স্বার্থে' ভারতের তরুণ সমাজকে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে বললেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি। এবার কলকাতায় এসে এই মন্তব্য করলেন তিনি। পাশাপাশি, কলকাতাকে উল্লেখ করলেন 'সারা ভারতের মধ্যে সবথেকে সংস্কৃতি মনস্ক শহর' হিসাবে।
এখানে এসে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স-এর শতবর্ষ পালনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন মূর্তি। তাঁর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা।
সেই মঞ্চ থেকেই ফের একবার নিজের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের তত্ত্ব পেশ করেন মূর্তি। ব্য়াখ্য়া করে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন দেশের স্বার্থে তরুণদের এত দীর্ঘ সময় ধরে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটা দরকার!
তাঁর কথায়, 'ইনফোসিসে আমি যেমনটা বলি, আমরা সবথেকে সেরাটাই করব এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যারা সেরা, তাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করব। আমরা যখনই বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করব, আমি আপনাদের বলছি, তখনই দেখবেন, ভারতীয়দের অনেক কিছুই করতে হবে। আমাদের নিজেদের আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়াতে হবে। কারণ, দেশের ৮০০ মিলিয়ন মানুষকে বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ করা হয়। যার অর্থ হল, ৮০০ মিলিয়ন মানুষ এখনও দরিদ্র। আমরা যদি কঠোর পরিশ্রম না করি, তাহলে কে করবে?'
একজন উদ্যোগপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে যুবা বয়সে তিনি কীভাবে নিজেকে তার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন নারায়ণ মূর্তি। তিনি জানান, যুবা বয়সে তিনি বামপন্থী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। সেই সময় জওহরলাল ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তখনই আইআইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৭০-এর দশকে মূর্তি প্যারিসে কাজ করতেন। সেই সমস্ত দিনেরও স্মৃতিচারণ করেন তিনি। তখনই তাঁর মনে হয়েছিল, ভারতকে উন্নত করতে গেলে একটু অন্যরকমভাবে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আমার বাবা সেই সময় খালি দেশের অসাধারণ সমৃদ্ধি নিয়ে কথা বলতেন। আসলে আমরা নেহরুর সমাজতন্ত্রের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তখন প্যারিসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেটা ৭০-এর দশকের প্রথম দিকের কথা। কিন্তু, প্যারিসে গিয়ে আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আসলে পশ্চিমের মানুষ তখন ভারতের আবর্জনা এবং দুর্নীতি নিয়ে কথা বলত। তখন আমার দেশে দারিদ্র্য ছিল। রাস্তা খানা-খন্দে ভরা ছিল।...'
মূর্তি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, '...অথচ ওখানে (প্যারিসে) সমস্ত মানুষই তখন সমৃদ্ধ। সেখানে ট্রেন সর্বদা টাইমে চলত। এবং আমি ভেবেছিলাম, এখানে কোনও ভুল হতে পারে না। আমি ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির নেতার সঙ্গে দেখা করলাম। যাতে তাঁর কাছে আমার সমস্ত প্রশ্নের জবাব পেতে পারি। তিনি আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কিন্তু, আমি তাতে সন্তুষ্ট ছিলাম না।...'
'...আমি আসলে বুঝতে পেরেছিলাম, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে তার একমাত্র উপায় হল, নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ, তাহলে মানুষের হাতে টাকা আসবে। নতুন উদ্যোগ শুরু করার ক্ষেত্রে সরকারের একেবারেই কোনও ভূমিকা নেই।'
এমনকী, মূর্তি এই মঞ্চে এও দাবি করেন যে আসলে উদ্যোগপতিরাই দেশ গঠন করেন। কারণ, তাঁরা কর্মসংস্থান করেন। তিনি বলেন, 'উদ্যোগপতিরাই কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশ গড়েন। তাঁরা তাঁদের বিনিয়োগকারীদের জন্যও সম্পদ সৃষ্টি করেন। এবং তাঁরা কর প্রদান করেন। তাই রাষ্ট্র যদি পুঁজিবাদকে আপন করে নেয়, তাতে ভালো রাস্তা তৈরি হবে, ভালো ট্রেন হবে এবং ভালো পরিকাঠামো গড়ে উঠবে।'