রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো কোনওমতেই করা যাবে না। ২০১৭ সালে জারি করা নিষেধাজ্ঞাই বলবৎ থাকবে। বৃহস্পতিবার এই কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালত। খারিজ করে দেওয়া হল কলকাতা মেট্রোপলিট্যান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) আর্জি।
সম্প্রতি রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো আয়োজনে জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিল কেএমডিএ। একইসঙ্গে এর বিরোধিতা করে পাল্টা আবেদন করেন পরিবেশকর্মীরা। তারই শুনানি ছিল আজ, বৃহস্পতিবার। আর তাতে জাতীয় পরিবেশ আদালত তাদের পুরনো অবস্থান থেকে সরে না আসায় মুখ পুড়ল কেএমডি–এর। মান্যতা পেল পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন, উদ্বেগ।
জানা গিয়েছে, গত বছর ছটপুজোর সময় রবীন্দ্র সরোবরে হওয়া বিতর্কিত ঘটনার কথা জানিয়েই আদালতে আর্জি পেশ করে কেএমডিএ। জানানো হয়, কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় পুকুর বা জলাশয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ছটপুজো করার সুষ্ঠু আয়োজন করা সত্ত্বেও কীভাবে সকলে ভিড় করে রবীন্দ্র সরোবরে। গেটের তালা ভাঙা থেকে পুলিশের লাঠিচার্জ— সব কিছুই জানানো হয় আবেদনে। তাই এই বছর সেই সম্ভাবনা আগে থেকেই দূর করতে আর্জি জানানো হয় জাতীয় পরিবেশ আদালতে।
উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ২০১৯–এর নভেম্বরে ছটপুজোর সময় বন্ধ গেট জোর করে খুলে সরোবরে ঢুকে পড়ে বহু মানুষ। সঙ্গে নিয়ে আসে ঢোলতাসা, বাজনা। ফাটানো হয় দেদার শব্দবাজি। এই ঘটনাকে ঘিরে সে বার মারাত্মক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সরোবরের বাসিন্দা এক কচ্ছপের দেহ ভেসে ওঠার পরে বিতর্ক আরও বাড়ে। মাছের মড়কও দেখা দেয়।
১৯২ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত রবীন্দ্র সরোবরে ৭ হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক আমফান ঘূর্ণিঝড়ে এর অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবুজ ঘেরা এই কৃত্রিম হ্রদ ও গাছগাছালি পাখিদের স্বর্গরাজ্য। প্রায় ২০০ প্রজাতির পশুপাখি এখানে বাস করে। বছরের বিভিন্ন সময়ে সরোবরে ভিড় করে পরিযায়ী পাখিরা। যাদের দেখতে দূর–দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পক্ষীপ্রেমী মানুষজন। এর বিশাল ঝিলে বিভিন্ন প্রকারের মাছও রয়েছে।
কেএমডিএ–র এক আধিকারিক নিজের পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। পুলিশও কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি কারণ মহিলারাই ছটপুজোর রীতিনীতি পালন করেন। এই বছর ২০ নভেম্বরে ছটপুজো। আমরা তাই শুধুমাত্র এই বছরের জন্য রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম।’ যদিও সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।