প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে প্রকৃতিই রক্ষা করবে প্রকৃতিকে। প্রবল জলোচ্ছাসে ইট, কংক্রিটের তৈরি বাঁধ ভাঙবেই। তাই ইয়াসে বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্র বা নদীতীরে আম্ফানে ভেঙে পড়া গাছের গুড়ি দিয়ে প্রতিরোধ গড়তে জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পাশাপাশি সুন্দরবন ও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভের চারা গাছ বসানোর উপর জোর দিয়েছেন তিনি। বুধবার নবান্নে ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে সংস্কার করা যায়, এই নিয়ে একাধিক বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেখানেই প্রাকৃতিক উপায় কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি সংস্কার করা যায়, আধিকারিকদের সেই পথও অবলম্বন করতে বলেছেন তিনি। তাছাড়া সুন্দরবনের মতো পূর্ব মেদিনীপুরেও ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরির কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি জানান, বনদপ্তরের তক্তাবধানে আরও ৫ কোটি করে ম্যানগ্রোভ চারা বসাতে হবে দুই ২৪ পরগনা লাগোয়া সুন্দরবন ও দিঘায়।
ইয়াস তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগনা, দিঘা ও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় এলাকা। তছনছ হয়ে গিয়ে দিঘার পাড়ে রাজ্যের তৈরি করা সৌন্দর্যায়ন। সেক্ষত্রে সমুদ্রতীরে পাথর, বোলডার বসানোর কাজে গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দীঘার পাড় আরও মজবুত করতে আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আমফানে উপড়ে যাওয়া গাছগুলো দিয়ে
উপকূলীয় এলাকাগুলোর বাঁধ দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। এদিন তিনি বলেন, ‘ আম্ফানে উপড়ে পড়া এত গাছ কোথায় গেল? কোন দফতর নিয়েছে? সে যারাই নিয়ে থাকুক না কেন, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে না আছে, তিন দিনের মধ্যে আমার রিপোর্ট চাই। রিপোর্টের জন্য বসে থাকবেন না। কারণ, ২৬ তারিখে ফের ভরা কোটাল রয়েছ। তার আগেই সমস্ত কাজ সেরে ফেলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ তার আগে ইয়াসে ভেঙে পড়া সমস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামতি করতে হবে। ঘাসের মতো যে গাছের গুঁড়ি রয়েছে, সেখানে সেগুলো ব্যবহার করুন।’
কীভাবে তিনি প্রত্যেক্ষ্য সেখানে গিয়ে নিজের চোখে ধ্বংসলীলা দেখে এসেছেন, তার ছবি এঁকেআধিকারিকদের বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর পর তিনি বলেন, ‘ প্রত্যাক বার ঝড় আসবে, আর ক্ষয়ক্ষতি হবে। এমন জায়গায় টাকা ঢেলে কোনও লাভ নেই যেখানে কংক্রিটের বাঁধ ভাঙবেই। বরং সেখানে পরিকল্পনামাফিক টাকা খরচ করতে হবে যাতে যে কোনও নির্মাণ বছরের পর বছর টিকে থাকুক। প্রয়োজনে যারা এই সংস্কারের কাজ করবে, তাদের অন্তত দশ বছর করে কাজের দায়ীত্ব নিতে হবে।’
সেক্ষেত্রে এদিন প্রাকৃতিক উপাদানের উপর বেশি করে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।