কিছুদিন আগেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেছিলেন তিনি একবার বিদেশের একটি বিমানবন্দরের লাউঞ্জে দেখেছিলেন যে টি ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে সেটা দার্জিলিং টি। কার্যত দার্জিলিংয়ের চায়ের গুণগান করতে গিয়েই তিনি একথা জানিয়েছিলেন। অনেকের মতে, গোটা বিশ্বজুড়ে আজও দার্জিলিংয়ের চায়ের কদর রয়েছে। কিন্তু তার মাঝেই ঢুকে পড়ছে নেপালের চা। কম দামে বিক্রি হওয়া এই চা এবার দার্জিলিংয়ের চায়ের বাজারে থাবা বসাচ্ছে। এমনকী পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে এই নেপালের চায়ের দাপটে দার্জিলিংয়ের একাধিক টি গার্ডেনে মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। এমনকী দার্জিলিংয়ের একাধিক চা বাগান বন্ধের পেছনের অন্যতম কারণ হল এই নেপালের চায়ের দাপট।
দার্জিলিংয়ের ৮৭টি বাগানের মধ্য়ে অন্তত ১৬-১৭টি বন্ধ। এদিকে নেপালের চা কার্যত দার্জিলিংয়ের বহু চা শ্রমিক পরিবারে আঘাত হানছে। কিন্তু দার্জিলিংয়ের চা তো দার্জিলিংয়েরই। আর নেপালের চা নেপালের। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কেন দার্জিলিংয়ের চা ছেড়ে আচমকা নেপালের চা খাওয়া ধরলেন?
অভিজ্ঞমহলের দাবি, দার্জিলিংয়ের চা ছেড়ে নেপালের চা খাচ্ছেন এমনটা ঠিক নয়। আসলে বিক্রেতাদের একাংশ দার্জিলিংয়ে চা বলে নেপালের চা বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও বুঝতে না পেরে কিছুটা সস্তায় নেপালের চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যার কুফল ভুগছে দার্জিলিং।
দেশের বাজারে হাজার টাকা কেজি দরে ও তার কমে যে সমস্ত চা বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশই নেপালের টি। সাধারণ মানুষ বুঝতে না পেরে সেই চা দার্জিলিংয়ের টি বলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার পান করার সময় বুঝতে পারছেন কিছু যেন একটা মিসিং হয়ে যাচ্ছে। আর সেই মিসিং লিঙ্কটা যেন দিনকে দিন বাড়ছে। আর তার জেরে সংকটে পড়ছে দার্জিলিংয়ের চা।
নেপালের চা ভারতের বাজারে প্রভাব ফেলল কীভাবে?
আসলে তার জন্য প্রায় ২৫ বছর আগে ফিরতে হবে। তখন দার্জিলিংয়ের চা বাগানের প্রচুর শ্রমিক চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে নেপালের চা বাগানে কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এরপর তারা তখন নেপালের চা বাগানের উন্নতির ব্যাপারে সচেষ্ট হন। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নেপালে চা চাষের উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। এরপর সমস্যা বুঝতে পেরে দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় দার্জিলিং টি এর জিআই ট্যাগ নিশ্চিত করে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হল। কিন্তু ২০১৭ সালে মোর্চার আন্দোলনে স্তব্ধ হয়েছিল পাহাড়। বন্ধ হল চা বাগান। আর সেই সুযোগে ভারতের বাজারে চলে এল নেপালের চা। সেই শুরু।