প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন প্রকল্প বন্ধ করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ডিসেম্বর মাসেই শেষ হচ্ছে এই প্রকল্পের মেয়াদ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গণ বণ্টন দফতর। আবার ‘ফ্রি’ রেশনের চমকের আড়ালে বছরে ১১৪ কোটি টাকার বেশি অর্থ থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করতে চলেছে মোদী সরকার। এখন রাজ্য সরকারকে এই টাকা দেওয়ার পথ বন্ধ করা এবং কোভিড–পর্বের বিশেষ পাঁচ কেজির রেশন (প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা) ডিসেম্বর মাসেই শেষ হয়ে যাওয়ায় দোকানদাদেরও উপার্জনে কোপ পড়তে চলেছে। তাই ‘ফ্রি’ রেশনের ঢাক পিটিয়ে মোদী সরকার গরিবদের মন জয়ের চেষ্টা করলেও আসলে রাজ্য সরকার এবং দোকানদার, উভয়ই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে।
ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে চলা রেশনের যাবতীয় খরচ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। জানুয়ারি মাস থেকে তা কার্যকর হবে। এতে একদিকে রাজ্যগুলির আর্থিক বোঝা কমবে ঠিকই। অন্যদিকে রাজ্যের পাওনাও বন্ধ হয়ে যাবে। রাজ্যের মধ্যে খাদ্যশস্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থ দেওয়া হতো সেটা আর মিলবে না। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ ১১৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকা।
কেমন করে বঞ্চিত হবে বাংলা? সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আন্তঃরাজ্য খাদ্যশস্য যাতায়াতের খরচ হিসেবে কেন্দ্রের থেকে কুইন্টাল–প্রতি ৩৫ টাকা পায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলার ‘প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড’ আর ‘অন্তোদ্যয় অন্ন যোজনা’র নাগরিকদের জন্য প্রতি মাসে লাগে ২৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৩০ কুইন্টাল চাল–গম। ফলে খাদ্যশস্য যাতায়াতের জন্য পশ্চিমবঙ্গ প্রতি মাসে কেন্দ্রের থেকে ৯ কোটি ৫৬ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০ টাকা পায়। সেটাই বছরের শেষে গিয়ে ১১৪ কোটিরও বেশি দাঁড়ায়। জানুয়ারি মাস থেকে আর তা মিলবে না। এভাবেই বঞ্চিত হবে বাংলা।
‘ফ্রি’ রেশন সময়মতো মিলবে তো? রেশন দোকানদারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। কারণ খাদ্যশস্য বণ্টনে দোকানদারদের কমিশন এবং ই–পস মেশিন ব্যবহারে কুইন্টাল প্রতি ১১১ টাকা খরচ অর্ধেক করে দিত কেন্দ্র–রাজ্য। কেন্দ্র টাকা দিতে দেরি করলেও রাজ্যের থেকে তা পেতেন দোকানদাররা। এখন সবটাই দেবে কেন্দ্র। তাই এখন মোদী সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে বলেই জানিয়েছেন ‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনে’র সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। কমিশন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। আজ জয়পুরে হবে বৈঠক।