বাংলায় ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাজ্যের বাইরে মামলার বিচারপর্ব করারও সুপারিশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়া রিপোর্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ ব্যবহার করে রাজ্যকে রীতিমতো আক্রমণ করেছে কমিশন।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হিংসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে। এই ধরনের হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে। সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভারতীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। হিংসা ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যেও।
গত ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হিংসার অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ জায়গায় হিংসার অভিযোগ উঠেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কয়েক জায়গায় ‘হিংসার’ শিকার হয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরাও। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সেইসব ‘বিক্ষিপ্ত’ ঘটনার সময় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের উপর। নয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে। তারইমধ্যে জুনের মাঝামাঝি একটি জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা পড়ে। সেখানে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়। তারপরই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ভোট-পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি হাইকোর্টে যায় রাজ্য সরকার। দায়ের করা হয় পুনর্বিবেচনার আর্জি। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেই আর্জি খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরই ২১ জুন সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। যে কমিটি ইতিমধ্যে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখেছে। চলতি সপ্তাহে কমিশনের রিপোর্টও জমা পড়েছে।
৫০ পাতার রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে মানবাধিকার কমিশন। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সুরক্ষা দিতে হবে সাক্ষীদের। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের বন্দোবস্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে সেই রিপোর্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করবেন না। সেইসঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা যখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন হিংসার ঘটনা ঘটছিল।