রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং ডিসি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়নি। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্যে কর্মরত একজন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকার একতরফাভাবে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। তবে ব্যবস্থা নিতে পারে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের নালিশের জের, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে 'অ্যাকশনে' শাহের দফতর
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইপিএস সহ সর্বভারতীয় সার্ভিসেসের আইন অনুযায়ী, রাজ্যে কর্মরত আইপিএস বা আইএএস অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করতে পারে কেন্দ্র। অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (কন্ডাক্ট) রুলস ১৯৬৮ এবং অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড আপিল) রুলস ১৯৬৯ অনুযায়ী, আইপিএস সহ অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের আধিকারিকদের জন্য শাস্তিমূলক কর্তৃপক্ষ হল রাজ্য সরকার। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যেহেতু ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, তাই তারা আইপিএস অফিসারদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না তা রাজ্য সরকারের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, রাজ্য সেটি করতে অস্বীকার করতেও পারে। অর্থাৎ আইপিএসকে শাস্তিদানের বিষয়টি নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের উপর।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক একটি রাজ্য কর্মরত আইপিএস অফিসারকে খুব বেশি হলে ব্যাখ্যার জন্য তলব করতে পারে, এমনকী তাঁকে কেন্দ্রের কোনও পদ থেকে প্রত্যাহার করতে পারে। তবে এই উভয় কাজের জন্য রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। অথবা রাজ্য সরকার যদি আইপিএস অফিসারকে অব্যাহতি দেয় তবেই তা করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এর আগেও রাজ্যে এই এধরনের বির্তক সামনে এসেছে। কিন্তু, কেন্দ্র সেই সমস্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে একইভাবে কেন্দ্র পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ ঠিক এই কারণেই। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিদর্শনে এসেছিলেন সেই সময় উপস্থিত ছিলেন না। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ধর্নায় বসেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিনীত গোয়েল ও ইন্দিরার বিরুদ্ধে কতটা কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
উল্লেখ্য, গত মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, তিনি প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না কলকাতা পুলিশ আধিকারিকরা। ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাজভবনে কর্মরত অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এক মহিলা কর্মীর মনগড়া অভিযোগ প্রচার ও উৎসাহিত করার অভিযোগও তুলেছেন রাজ্যপাল।
তারপরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই চিঠির প্রতিলিপি ৪ জুলাই রাজ্য সরকারকে পাঠানো হয়েছে।