বারাসতে একাকী বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, দুষ্কৃতীরা চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় ওই বৃদ্ধাকে তারা খুন করেছিল। কিন্তু, এই খুনের পিছনে আরও বড় কারণ রয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই বৃদ্ধা এলাকায় মাদকাসক্ত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। সেই কারণে তাঁকে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করে টাকা, গয়না চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। যদিও ঘটনার ৬ ঘণ্টার মধ্যেই দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই তদন্তকারীরা এই তথ্য জানতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: টাকা হাতাতেই খুন, স্বরূপনগরে চাষের খেতে তরুণীর দেহ উদ্ধারে গ্রেফতার অভিযুক্ত
সোমবার গভীর রাতে শর্মিষ্ঠা মুন্সি নামে ওই বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ তাঁর শোওয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘরের দুটি আলমারি এবং সমস্ত জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস পত্র চুরি করেছিল দুষ্কৃতীরা। পরে তাদের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বারাসত আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ জানায়, দুই অভিযুক্ত রাজু চক্রবর্তী ও রথীন পোদ্দার ওরফে বল্টু ও মানিক মাদকসেবন করত। দুইজনকে আগে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল এবং সপ্তাহ দুয়েক আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেই তারা ওই বৃদ্ধাকে খুন করে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে এবং অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিল।
বারাসতের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, আমরা জানতে পেরেছি যে অভিযুক্তরা জানতে পেরেছিল যে বৃদ্ধা বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছিল। সেই উদ্দেশ্যে তারা রবিবার গভীর রাতে ওই বৃদ্ধার বাড়ির পিছনের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। তারপর একটি স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে তাঁকে একাধিবার আঘাত করে খুন করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে।’ অভিযুক্তরা ইতিমধ্যে অপরাধ স্বীকার করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাঁর স্বামী ডব্লিউবিএসইডিসিএলের প্রাক্তন আধিকারিক ছিলেন। ৬ মাস আগে তিনি মারা গিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে কর্মসূত্রে পুনেতে থাকেন এবং তাঁর মেয়ে বিবাহিতা। তারপর থেকেই বারাসতের নওপাড়া কালীবাড়িতে একাই থাকতেন। বৃদ্ধার ভাই কৌস্তভ চক্রবর্তী জানান, রবিবার সকাল ১১.৪৫ টার দিকে তাঁর মেয়ে তাঁর সম্বে ফোনে শেষ কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে, সোমবার সকাল থেকে মাকে বারবার ফোন করেও না পেয়ে শেষে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর কৌস্তভ বাবু বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখতে পান দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কোনও সাড়াশব্দ নেই। পরে পুলিশে খবর দিলে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে পুলিশ বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায়।