কর্মী-সঙ্কট মোকাবিলা করতে কলকাতা মেট্রোর একাধিক স্টেশন পরিচালনার ভার এক জন করে স্টেশন সুপারের উপরে ন্যস্ত করার নির্দেশ জারি করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আগে থেকে নিউ গড়িয়া-রুবি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ এবং হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড রুটে এই ব্যবস্থা কার্যকর হলেও এবার তা সব ক’টি মেট্রোপথেই চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কর্মী মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মঙ্গলবার, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের দিন জারি হওয়া এই নির্দেশে উত্তরের বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর এবং দমদম-বেলগাছিয়ার মতো স্টেশনের দায়িত্ব এক জন সুপারকে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণে কবি সুভাষ ছাড়া অন্যান্য স্টেশনগুলিতে এক জনের উপরে দু’টি করে স্টেশনের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। একই পন্থা অনুসরণ করা হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট, নিউ গড়িয়া-রুবি এবং জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোয়।
আরও পড়ুন। ভিক্ষা' নয়, ডাক্তারির স্বপ্নওপূরণ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, তোপ 'বিপ্লবী'-দের
মেট্রো কর্তৃপক্ষের একাংশের ব্যাখ্যা, স্টেশন সুপারদের কাজ হল সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা তদারকি করা। তাঁদের মতে, এক জনকে দু’টি স্টেশনের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে কিছু ক্ষেত্রে কাজের চাপ লাঘব করা সম্ভব হবে। অতীতে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় প্রতিটি স্টেশনে এক জন করে সুপার ছিলেন। তাঁদের অধীনে কাজ করতেন স্টেশন মাস্টার বা ট্র্যাফিক সুপারভাইজার।
তবে স্টেশন সুপারদের বড় অংশের আশঙ্কা, এই ব্যবস্থা স্টেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং গুণমান বাড়াবে না, বরং বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে দৈনন্দিন পরিষেবায়। তাঁরা জানাচ্ছেন, দূরের কোন স্টেশনে বড় ধরনের অঘটন ঘটলে তাঁদের পক্ষে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। সেখানে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।
মেট্রোর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় আধুনিক প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর সহ একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে, তাই সেখানে বিপত্তির আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে কম। কিন্তু উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় সুরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক ব্যবস্থা অনুপস্থিত, কিংবা থাকলেও পুরনো প্রযুক্তির। এমন পরিস্থিতিতে দু’টি স্টেশনের দায়িত্ব এক জন সুপারকে দিলে ঝুঁকি থেকে যায়। আচমকা ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা যাত্রী-বিক্ষোভ তৈরি হলে সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্টেশন সুপারদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রাজ্যের শাসকদল-ঘনিষ্ঠ ‘প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘মেট্রোকর্তারা বুঝতে পারছেন না যে স্টেশন পরিচালনা আর স্টেশন পরিদর্শন এক নয়। স্টেশন পরিচালনার জন্য নিবিড় মনঃসংযোগ লাগে।’
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, এক জনকে দু’টি স্টেশনের দায়িত্ব দেওয়ায় পরিচালন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। তবে কর্মী মহলের একটি বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন এবং মনে করছেন এটি পরিষেবার মানের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।