সে ও ছিল এক ৫ জানুয়ারি। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের একাংশের তাণ্ডবে লজ্জিত হয়েছিল গোটা দেশ। স্টাফ রুম থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে টেনে হেঁচড়ে বার করে পিটিয়ে ছিল তৃণমূলের গুন্ডারা। তখনও প্রথম বর্ষপূর্তি হয়নি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের। প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ছোট ছোট ছেলেরা ভুল করে করে ফেলেছে। তবে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী। যাঁকে ছোট ছেলে বললে হয়তো লজ্জা পাবেন তিনি নিজেই। ৮ বছর পর JNU-তে শিক্ষাঙ্গনে একই রকম তাণ্ডবে আজ 'ফ্যাসিবাদী আক্রমণ' বলে সুর চড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ইতিহাস বলছে, লঙ্কায় যে যায় সেই হয় রাবণ।
শাকদলের কলেজের ছাত্র সংসদ শিকারের নেশা নতুন নয়। ক্ষমতায় এসেই ছলে - বলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিতে পিছিয়ে নেই কোনও পক্ষই। ইতিহাস অন্তত তাই বলছে। তা সে বাম জমানা হোক বা অধুনা তৃণমূল, শিক্ষাঙ্গনে শাসানি, হিংসা ও রক্তপাতের ধারা অবিরাম। দিল্লিতে যার আরেক রূপ দেখল দেশ।
মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও ছাত্র রাজনীতি থেকেই রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নে সবাই একই রকম সিদ্ধহস্ত। বাম জমানা থেকে চর্চা শুরু করলেই ছবিটা স্পষ্ট হয়। জ্যোতি বাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অবামপন্থীদের অস্তিত্ব খুঁজে বার করা মুশকিল হত। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার পরও ২০০৭ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি প্রায় একই ছিল। কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে বামেদের একচ্ছত্র আধিপত্য। এমনকী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংগঠনেও ছিল শাসক বামের একাধিপত্য। অভয়ারণ্যে বাঘের মতো বিরল ছিল বিরোধীতার পরিসর।
তৃণমূল আসার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বামেদের সরিয়ে একে একে ছাত্র সংগঠনগুলি দখল করতে থাকে তৃণমূল। তবে বিরোধীদের সামান্যতম পরিসর দিতেও নারাজ ছিল তারা। ফলে রীতিমতো মাফিয়ারাজ কায়েম করে চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল। যাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
যার মূল্যও চোকাতে হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। হাতে ছিল দলের পতাকা। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান ২০০ বছরের পুরনো বেকার ল্যাবরেটরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। রেহাই পাননি পড়ুয়া, শিক্ষক ও গবেষকরাও। যা নিয়ে বিবাদও শুরু হয় তৃণমূলেরই অন্দরে। সবেতেই চুপ ছিলেন শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব। জারি ছিল দায় ঝাড়ার খেলা।
ছাত্রভোট দাবি করে তৃণমূলি শিক্ষাকর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। যাদবপুরে হোক কলরব থেকে সাম্প্রতিক ছাত্রভোটের দাবিতে তৃণমূলি অশিক্ষক কর্মীদের হামলা, সবেই ছিল শাসকের রক্তচক্ষু। তবে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর যদিও সুর কিছুটা নরম হয়েছে শাসকদলের। গত জুলাইয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে কলেজের সামনে আক্রান্ত হন অধ্যাপক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। পরদিন তাঁকে ফোন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রেফতার হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২ সদস্য।
ক্ষমতায় বুঁদ হয়ে শিক্ষাঙ্গন দখলের মরিয়া চেষ্টা আমাদের দেশে কোনও নতুন ঘটনা নয়। নতুন নয়, পড়াশুনো করতে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়াদের হিংসায় জড়িয়ে পড়ার নজিরও। যাদের ভবিষ্যত্ বাজি রেখে রাজনীতির দান খেলেন নেতারা।সেই নেশাতেই জেএনইউতে হামলা চালিয়েছে ABVP। হামলাকারীদের বিচার হোক বা না - হোক, রোগ নিরাময়ের ওষুধ এখনো অজানা।