একজন নতুন দল গড়ে বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট দখল করতে চাইছেন। আর একজন সুদূর হায়দরাবাদ থেকে এসে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট কাটতে চাইছেন। এবার দু’জনেই প্রায় মিলে গেলেন। হ্যাঁ, একজন এআইএমআইএম (মিম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। আর একজন পীরজাদা আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকি। আর এই ভোট কাটার সমীকরণ ঠিক করতেই হুগলির ফুরফুরা শরিফে এসেছিলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক ফায়দা হবে না বলেই মনে করছেন ইমাম, খলিফা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর ওয়েইসি বলেন, ‘আমরা বৈঠক করেছি। আব্বাস সিদ্দিকি আমার চেয়ে বড়। আব্বাস সিদ্দিকিকে সঙ্গে নিয়েই বাংলায় লড়বে মিম।’ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য বিহার ও উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী দিয়েছিল মিম। কিন্তু বাংলায় সেটা করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বেশকিছু মুসলিম ইমাম ও খলিফারা।
কথা ছিল ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। কিন্তু তা হয়নি। গত সোমবার ভাঙড়ের চণ্ডিহাটের সভায় আব্বাস বলেন, ‘নতুন দল গঠন নিয়ে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। দুটি সংসদীয় দলও আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে।’ ইতিমধ্যেই তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেছেন, বাংলায় কোন জায়গা নেই ওয়েইসির দলের।
ফুরফুরা শরীফের অপর পীরজাদা তথা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা বলেন দুর্নীতিমুক্তির কথা। বাংলায় এবার ভোট হবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। বিজেপিকে জবাব দেবে মানুষ।’ এদিকে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ২৭.০১ শতাংশ মুসলিম রযেছে বাংলায়। যা ধরে নেওয়া হচ্ছে এখন ৩০ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় মুসলিম সংখ্যা ভাল রয়েছে। যেমন—মুর্শিদাবাদ (৬৬.২৮%), মালদহ (৫১.২৭%) উত্তর দিনাজপুর (৪৯.৯২%), দক্ষিণ ২৪ পরগণা (৩৫.৫৭%) এবং বীরভূমে (৩৭.০৬%)। এছাড়া পূর্ব–পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগণা এবং নদিয়াতে ভাল সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে।
শুরু থেকেই মমতার সরকারকে নিশানা করে চলেছেন আব্বাস। এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের কোনও উন্নতি হয়নি বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। আব্বাস বলেন, ‘আমাদের সভায় এত সংখ্যক মহিলারা এগিয়ে আসছেন দেখে বোঝা যাচ্ছে গোটা পরিবার আমাদের সঙ্গে আছে। এবার আমরা নিজেদের জন্য লড়াই করব। নিজেদের অধিকার বুঝে নেব।’
এই সমীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এমনকী ১২০টি বিধানসভা আসন এই ভোটের উপর নির্ভরশীল। যেখানে ২৯৪টি আসন রয়েছে। সেখানে ২০০ বেশি আসন জিততে হবে বলে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদি ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দাবি, ৯৯ পেরোতে পারবে না গেরুয়া শিবির।
কিছুদিন আগে একটি জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাতে হায়দরাবাদ থেকে বিজেপি একটা পার্টিকে ডেকে এনেছে। মনে রাখবেন, বিজেপি ওদের টাকা দেয়, আর ওরা ভোট ভাগাভাগি করে সব জায়গায়। বিহার নির্বাচনেও সেটা প্রমাণ হয়েছে। হিন্দু ভোট বিজেপি নেবে, মুসলিম ভোট ওরা নেবে, আমি কি কাঁচকলা নেব?’
অন্যদিকে ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম এখানে একটা পরিচয় মাত্র। আসলে তাঁরা সবাই বাঙালি। এই বাঙালিদেরই অনুপ্রবেশকারীর তকমা দেওয়া হচ্ছে। কিছু নেতা গুজরাট এবং হায়দরাবাদ থেকে এখানে এসে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।’ নাখোদা মসজিদের ইমাম মৌলানা মহম্মদ সাফিক কাশমী বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে কোনও দলেরই লাভ হবে না।’