প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন বারাণসীর একটি হাসপাতালে। সেই বারাণসীতেই জীবনাবসান হয়েছে তাঁর।
বারাণসীর থিওসফিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার একটা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়েছিলেন পঙ্কজ দত্ত। সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বারাণসীর একটা হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত। শনিবার প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
স্পষ্টবক্তা হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন পঙ্কজ দত্ত। তিনি একেবারে আপোষহীন ছিলেন। শাসকদলের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে একেবারে জোর গলায় তিনি বার বার প্রতিবাদ করে গিয়েছেন। সেই পঙ্কজ দত্ত চলে গেলেন। চিরবিদায় পঙ্কজ দত্ত।
এদিকে পঙ্কজ দত্ত প্রতি সন্ধ্য়ায় কার্যত টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিতেন। সেখানে একের পর এক একেবারে আপোষহীন বক্তব্য রাখতেন তিনি। এজন্য তাঁকে নানা সময়ে নানা সমালোচনা, চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরেনি।
সূত্রের খবর, বারাণসীর ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পঙ্কজ দত্ত বলতেন, আমি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলব। তার জন্য যদি আমার জীবন চলে যায় তবুও আমি বলব।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্য়ায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, পঙ্কজ দত্ত চলে গেলেন এই খবরে আমরা অত্যন্ত বিষন্ন হয়ে পড়েছি। আগাগোড়া তিনি গঠনমূলক সমালোচনা করে গিয়েছেন। তিনি বার বার মুখ খুলেছেন। বটতলা থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছিল…আমি বার বার অনুরোধ করেছিলাম ওঁকে ছেড়ে দিন। এরপর তিনি বারাণসীতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পঙ্কজ দার মতো মানুষ বার বার ফিরে আসুন। বাঙালি পরে বুঝতে পারবে কী ক্ষতি হয়ে গেল।
এদিকে পঙ্কজ দত্তের প্রয়াণে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চিত্রশিল্পী সমীর আইচ বলেন, যেভাবে শাসকদল তাঁর কণ্ঠস্বরকে রোধ করলেন তা ভাবতে পারছি না। শাসকদল তাদের কুচক্রে থাকা কিছু মানুষকে দিয়ে যে ভাবে অভব্যতা করেছিল তা ভাবতে পারছি না। আজ বাঙালির অত্যন্ত বেদনাময় দিন।
এদিকে জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে তাঁকে কিছু অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য়ে পড়তে হয়েছিল। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানকার অন্যতম বক্তা ছিলেন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার পঙ্কজ দত্ত। সেখানেই তিনি যৌনকর্মীদের কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও সোনাগাছি শব্দটি উল্লেখ করেন। এরপরই শাসকদল, পুলিশ তাঁকে নানাভাবে চাপে ফেলা শুরু করেছিল বলে অভিযোগ।
টিভির বিতর্কসভায় অত্যন্ত পরিচিত মুখ ছিলেন পঙ্কজ দত্ত। নানা সময়ে নানা প্রগতিশীল কথা বলতে শোনা যেত তাঁকে। এমনকী তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও নানা সময় সরব হতেন। চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হল সেই কণ্ঠস্বর।