সকালেই ললাট লেখা হয়ে গিয়েছিল। কোনদিক থেকে আগে খাঁড়া নামবে, শুধু সেটা নিয়েই জল্পনা ছিল। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূল কংগ্রেসের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের আগে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থের হাতে তিনটি দফতর ছিল। তিনটি থেকেই বরখাস্ত হলেন মমতার এককালের ‘অনুগত সৈনিক’।
বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সেই বৈঠক মাত্র ১৫ মিনিট চলে। সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পার্থের বিষয়ে একটা শব্দও খরচ করা হয়নি। সেই বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, আজ (২৮ জুলাই) থেকেই পার্থকে শিল্প দফতর, পরিষদীয় দফতর এবং তথ্যপ্রযুক্তি দফতর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: ‘ফোড়া পুঁজে ভরতি, এখনই ফাটানো ভালো', পার্থের জন্য ঠাকুমার টোটকা দিলেন দেবাংশুর
সেই বিজ্ঞপ্তি জারির কিছুক্ষণ পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘পার্থদার কাছে যা যা দফতর ছিল, সেগুলো আমার কাছে আসছে। এখন হয়ত আমি কিছু করব না। কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভা তো গঠন করা হয়নি।’ তবে মমতা 'বরখাস্ত' এবং ‘অপসারিত’-র মতো শব্দ ব্যবহার করেননি। বরং ‘অব্যাহতি’ ব্যবহার করেছেন মমতা।
যদিও পার্থকে সরিয়ে দেওয়ায় তেমন সন্তুষ্ট নয় বিরোধী দলগুলি। বরং সিপিআইএম, বিজেপি, কংগ্রেস - সব দলেরই দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতি মামলায় পার্থ ‘বোড়ে’ ছিলেন। তিনি একা ছিলেন না। কিন্তু দুর্নীতির মূল মাথাকে সরাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ইস্তফার দাবি তুলেছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, পার্থকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। পুরো শাসক দল জড়িত।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় পার্থের গ্রেফতারির পর থেকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়ে যায় রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। বিশেষত দুর্নীতির অভিযোগটা শিক্ষা নিয়ে যাওয়ায় একেবারে আমজনতা, মধ্যবিত্তের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। সেইসঙ্গে পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় আরও অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে গ্রেফতারির ছয়দিন পর পার্থের উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে।
প্রাথমিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছিলেন?
সোমবার বঙ্গ-সম্মান প্রদানের মঞ্চে পার্থের দায় ঝেড়ে ফেলেন। ‘দুঃখপ্রকাশ’ করে মমতা বলেছিলেন, ‘ভোগ করার জন্য রাজনীতি করিনি। আমি ছোট্টবেলা থেকে রাজনীতি করি, কারণ আমার একটা ধারণা ছিল যে রাজনীতি মানে ত্যাগ, দেশসেবা, মানুষকে ভালোবাসা। এই (শিক্ষা) আমার বাবা এবং মায়ের থেকে পেয়েছিলাম। টিচারদের থেকেও পেয়েছিলাম। কিন্তু বলুন তো, স্কুলে কি সব পড়ুয়ারা কি একরকম হয়? হলে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা কি একরকম জামা পরে এসেছেন? পার্থক্য তো থাকবেই।'
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘অন্যায়কে সাপোর্ট আমি করি না, ভুল বুঝবেন না। দুর্নীতিকে সাপোর্ট করা আমার জীবনের নেশা তো নয়, পেশাও নয়….আমি আজ সত্যিই দুঃখিত, মর্মাহত, শোকাহত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আচরণে।’ সঙ্গে বলেছিলেন, কারও দোষ প্রমাণিত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।