প্রবাসী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকার তুমুল সমালোচনা করলেন বিজেপি নেতা অমিত শাহ। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভার্চুয়াল জনসভায় তিনি এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুমুল সমালোচনা করেন। বলেন, শ্রমিকদের ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলে তাঁদের চরম অপমান করেছেন মমতা। এর মূল্য তাঁকে চোকাতে হবে। এই করোনা এক্সপ্রেসে করেই তৃণমূলকে বাংলার বাইরে বার করবে পশ্চিমবঙ্গের জনতা।
এদিন শাহ বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার জন্য দেশজুড়ে প্রবাসী শ্রমিকদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। আমরা গোটা দেশে ৪,৩০০ ট্রেন চালিয়ে ১.২৫ কোটি মানুষকে তাদের বাড়িতে পৌঁছেছি। তাদের খাবার দিয়েছি, জলের বোতল দিয়েছি। রাজ্য সরকারগুলি তাদের স্টশেন পৌঁছনো ও ট্রেন না পাওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছে। এজন্য রাজ্য সরকারগুলিকে ১১,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র।‘
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ‘এখনো পর্যন্ত পর পশ্চিমবঙ্গে দেশের মধ্যে সব থেকে কম ট্রেন এসেছে। এখনো পর্যন্ত ২৩৬টি ট্রেনে পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছেন মাত্র ৩ লক্ষ মানুষ। উত্তর প্রদেশে ১,৭০০ ট্রেন চলেছে। বিহারে ১,৫০০ ট্রেন চলেছে।‘
এর পরই মমতার মন্তব্যের তীব্র ভর্ৎসনা করেন অমিত শাহ। বলেন, ‘যখন মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের কাছে আসছিলেন, করোনা সঙ্কটে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাইছিলেন, মমতাজি তাদের ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলে উল্লেখ করেন। এতে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। আমরা তাকে শ্রমিক ট্রেন নাম দিয়েছিলাম। মমতা দিদি তাকে করোনা এক্সপ্রেস বলেছেন।‘
মমতাকে অমিত শাহের কটাক্ষ, ‘মমতা দিদি, শ্রমিকদের ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলে বাঙালি শ্রমিকদের আপনি যে অপমান করেছেন। এই করোনা এক্সপ্রেসই আপনাকে বাংলার বাইরে বার করার রাস্তা হবে। তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলার বাইরে বার করার এক্সপ্রেস গাড়ি হবে।‘
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে শাহের আবেদন, ‘শ্রমিকরা এই অপমান ভুলবেন না। মানুষের কষ্টের সময় কাটা ঘায়ে আপনি নুনের ছিটে দিয়েছেন।‘
বলে রাখি, প্রবাসী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো নিয়ে গত প্রায় মাস খানেক ধরে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধ লেগে রয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকরা ফিরলে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় প্রথমে তাদের ফেরাতেই চাইছিল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেন চালালেও সেই ট্রেন পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পর মোট ২৩৬টি ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয় রাজ্য। এরই মধ্যে নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে করোনা এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে না তো?’ বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে প্রবাসী শ্রমিকদের ট্রেনের পুরো ভাড়া কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।