দু’দিন আগেই এই নবান্নে বসে আড্ডা মারা বন্ধ করতে জনগণের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। দু’দিনেই ১৮০ ডিগ্রি বদলে গেল তাঁর অবস্থান। শুক্রবার লকডাউন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও ঢিলেমির সুর। বললেন, তিন জনে মিলে ক্যারাম খেলুন, দূরে দূরে খেলুন না। পাশাপাশি বসার দরকার নেই।
গত বুধবার নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি খবর পাচ্ছি, অনেকে ক্যারাম খেলছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। হাত জোড় করে বলছি এসব বন্ধ করুন। আড্ডা মারার জন্য জীবনে অনেক সময় পাবেন।‘ একই সঙ্গে বাজার পাগল বাঙালিকে বুঝিয়েছিলেন, ‘এই কদিন বাড়িতে সিদ্ধভাত আর ডাল খেয়ে থাকুন। বাজারে যাবেন না।’ কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পার করতে না করতেই বদলে গেল করোনা প্রতিরোধে মুখ্যমন্ত্রীর নিদান।
শুক্রবার সেই নবান্নে বসেই সাংবাদিকদের উত্তরে মমতা বলেন, ‘বাংলায় সব থেকে ভাল লকডাউন হয়েছে। গ্রামবাংলার লোকেরা পুকুরে স্নান করে। গ্রাম বাংলার লোকেরা রাস্তাতেও হাঁটে। গ্রাম বাংলার লোকেরা হাওয়া-নিঃশ্বাস- বাতাসও পায়। গ্রাম বাংলা গ্রাম বাংলার মতো চলবে। তারা প্রত্যেকে লকডাউন সিস্টেমটা মানছেন। যে যার মতো করে মানছেন। পুলিশের প্রচার সব কিছু চলছে।‘
উদাহরণ দিয়ে লকডাউনের সাফল্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আপনারা দেখলেন, কালকে এতবড় একটা উৎসব ছিল। আজকে নমাজ বার, কই কেউ তো কিছু করেনি। গরমেন্টের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, করোনার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এর থেকে বেশি কী আশা করেন? আমি তো খুশি মানুষের পারফর্মেন্সে।‘
এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তিন জনে মিলে ক্যারাম খেলুন, দূরে দূরে খেলুন না। পাশাপাশি বসার দরকার নেই। চার জনে মিলে ওই কোনে কোনে। কিন্তু যদি ছোট ক্যামার হয় আমাকে ২ মিটার দূরত্ব তো রাখতে হবে, কোথা থেকে করব। দেখুন, নিজেদের মতো করে করুন। দূরত্ব মেইনটেন করে কথা বলা যেতে পারে। নাহলে একটা মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক না থাকলে যা আছে তাই মুখে বাঁধুন। যাতে আপনারটা অন্য কাউকে স্পর্শ না করে।‘
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে লকডাউনে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানই যদি আইন ভেঙে ক্যারাম খেলার নামে জমায়েত করার নিদান দেন তাহলে সাধারণ মানুষ আর লকডাউন মানবে কেন? প্রশ্ন তাঁদের।