স্তব্ধ কবিতার মুহূর্ত। শক্তি–সুনীল–শঙ্খ–উৎপল–বিনয়, জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতার এই পঞ্চপাণ্ডবের বাকি চারজন চলে গিয়েছিলেন আগেই। বুধবার চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষও। তবে প্রয়াত কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানাবে রাজ্য সরকার। শুধু বাদ থাকবে তোপ ধ্বনি। কারণ, কবি তা পছন্দ করতেন না। কবির ইচ্ছেকেই সম্মান জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার এই কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, কবিকে সম্মান জানানোর অন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘শব্দহীন হও, শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর...’ লিখেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। আসল নাম ছিল চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তাই বিদায়বেলায় শব্দহীন রাখা হল। এটা অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। অগ্রাধিকর দেওয়া হয়েছে কবির ইচ্ছাকে। আর তার মধ্যে দিয়েই ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ থেকে ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, ‘কবির অভিপ্রায়’— তাঁর সৃষ্টি বাংলা সাহিত্য জগতে অমর সম্পদ হয়ে থেকে যাবে।
শোকজ্ঞাপন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শঙ্খদার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করছি। তাঁর পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের সকলকে সমবেদনা জানাই। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন শঙ্খদা। তারপরও যাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা যায়, সেই বিষয়ে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। তবে শঙ্খদা গান স্যালুট পছন্দ করতেন না। সেটা বাদ রাখছি।’
‘হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়/ সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়/ এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে/ সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়’— প্রবাদ হয়েই থেকে যাবে শঙ্খ ঘোষের লেখা এই পংক্তিগুলি। তাই তো বহু মানুষ চেয়েছেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু সেটা করা যাচ্ছে না পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে। নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হবে কবির। বুধবার রাজ্য সরকারের সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম গিয়েছিলেন কবির বাড়িতে। তাঁরা জানান, অনেকেই কবিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোভিড সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তাঁদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। আর জ্ঞানপীঠ, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার–সহ যে অজস্র সম্মানে কবিকে ভূষিত করা হয়েছে শোকবার্তায় তারও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।