লোকসভা নির্বাচন মিটতেই ভোট পরবর্তী হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য। জেলায় জেলায় আক্রান্ত হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার আক্রান্তদের নিয়ে রাজভবনে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, সেখানে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়। রাজ্যপালের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও রাজভবনে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে সরব হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আক্রান্তদের রাজভবনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এই পদক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া চেয়ে পাঠিয়েছেন। যদি এখনও পর্যন্ত তা পাননি।
আরও পড়ুন: ‘রাজ্যপালের এখানে থাকার প্রয়োজন কী?’ প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ
এর আগের দিন একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু, সরকারের কাছ থেকে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকারের প্রতিক্রিয়া জানার পরেই তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের রাজভবনে প্রবেশে বাধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আক্রান্তদের রাজভবনে গিয়ে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলাম। তবে তাদের যেভাবে আটকানো হয়েছে তাতে আমি হতবাক হয়েছি এই দেখে যে কীভাবে আক্রান্তদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে বা তাদের জীবন রক্ষা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত জীবনের মৌলিক অধিকার তুলে ধরে সরকারের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘হিংসার শিকার ব্যক্তিরা তাদের অভিযোগ জানাতে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু, তাদের বাধা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে যা পদক্ষেপ করা হয়েছে সেটি ক্ষমার অযোগ্য। আমি এবিষয়টি সরকারের নজরে এনেছি।’
এরপর সংবিধানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল যদি মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের কাছে কিছু জানতে চান তাহলে রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর উচিত হল তা জানানো। কিন্তু, বারবার তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকার নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।’ রাজ্যপালের হুঁশিয়ারি, এরকম হলে আইন আইনের পথে চলবে।
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের বড়বাজারের মহেশ্বরী ভবনে রাখা হয়েছিল। আগের দিন সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। প্রায় ১৫০ জন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন। এবিষয়ে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘আমি ক্ষতিগ্রস্তদের কথা শুনেছি। একজন রাজ্যপাল হিসেবে আমি কোনও মন্তব্য করার আগে নিশ্চিত হতে চাই। সরকারের রিপোর্ট চেয়েছি। সরকারের বক্তব্য শোনার পর আমি আমার মতামত জানাব।’ রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, ‘সত্যকে চাপা দেওয়া যায় না। সত্য একদিন বেরিয়ে আসবে। পশ্চিমবঙ্গে অনেক হিংসার ঘটনা ঘটেছে যা দুঃখজনক।’