চলতি সপ্তাহে একের পর এক ঘটনায় কিছুটা হলেও কোণঠাসা পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। পুরনো কিছু মামলা, যার সঙ্গে শাসকদলের কেউ না কেউ জড়িত, সে সব দরজায় টোকা দিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। চলতি সপ্তাহে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই তৎপরতার পেছনে রয়েছে বিরোধী দল বিজেপি–র রাজনৈতিক প্রতিশোধের স্পৃহা— এমনই অভিযোগ তৃণমূলের।
২৪ অগস্ট নারদ কাণ্ডে তৃণমূলের ৫ নেতানেত্রীকে নোটিশ পাঠায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তৃণমূলের ২ সাংসদ সৌগত রায় ও ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রাক্তন সাংসদ আফরিন অপরূপা পোদ্দার, রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানো নোটিশে ইডি–র নির্দেশ, তাঁদের প্রত্যেককে নিজের এবং পরিবারের সম্পত্তির হিসেব, আয়–ব্যয়ের নথি ও ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।
এর পর ২৬ ও ২৭ অগস্ট পরপর দু’দিন বেশ তৎপরতা দেখা যায় সিবিআইয়ের কলকাতা অফিসে। নারদ কাণ্ড ছাড়াও সারদা, রোজ ভ্যালি, এমপিএস গ্রুপের মতো কোটি টাকার চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই। এবার তারাই তাদের অভ্যন্তরীন সংগঠন আরও শক্ত করল। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক সিবিআই আধিকারিক জানিয়েছেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার ২ কর্মকর্তা দিল্লি থেকে এসে কলকাতায় কাজে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে, ২৮ অগস্ট এনআইএ কর্তাদের জেরার মুখে পড়েন বর্তমানে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। এক দশকেরও বেশি পুরনো জোড়া মামলায় তাঁকে দফায় দফায় জেরা করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। একদা জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছত্রধর মাহাতোর নাম জড়িয়ে রয়েছে ২০০৯ সালের ভুবনেশ্বর–দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ঘটনার সঙ্গে। সেই ঘটনা এবং ওই একই বছরে সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাতো খুনের তদন্তে শুক্রবার দফায় দফায় জেরা করা হয় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণ কমিটির প্রাক্তন প্রধান ছত্রধর মাহাতোকে।
২৪, ২৬, ২৭, ২৮ অগস্ট— এই চারদিনের কেন্দ্রীয় কাণ্ডকারখানা ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। এই সপ্তাহে তাঁর সমস্ত প্রকাশ্য বিবৃতি, বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধী দলগুলিকে চাপে ফেলার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে বিজেপি।
রাজ্য বিজেপি–র সহ–সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সব কিছুর জন্য এভাবে বিজেপি–কে দায়ী করতে পারেন না। আদালতের নির্দেশেই চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। বরং, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশে রাজ্য পুলিশ মিথ্যা মামলায় বিজেপি নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে দিচ্ছে। এতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কার মানসিকতা কীরকম।’
নারদ কাণ্ডে ইডি–র নোটিশ পাওয়ার পর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘বহু বছর পর হঠাৎ এখনই আমাকে নোটিশ পাঠাল কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা। এর থেকে বিজেপি–র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ইঙ্গিত পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।’ শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছত্রধর মাহাতো বলেন, ‘আমি আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করি বলেই আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে। এনআইএ জানিয়েছে, আমাকে আবার জেরা করা হতে পারে।’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২১ সালের মে মাসে। তার আগে কেন্দ্র–রাজ্য চাপানউতোরে বেশ সরগরম রাজনীতির বাজার। ১০ বছর যাবৎ পশ্চিমবঙ্গে শাসন করে যাওয়া তৃণমূলের কাছে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। তাই এক চুল জায়গাও ছাড়তে নারাজ গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের সাম্প্রতিক অভিযোগ সেটি আরও পরিষ্কার করে দিল বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।