ঝাড়গ্রামে এক চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যু। চিকিৎসকমহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে এই ঘটনা। সেই চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এসেছে। তবে প্রাথমিকভাবে সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। কিন্তু এবার প্রশ্ন চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্যের তাহলে মৃত্যু হল কীভাবে? বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুরের একটি লজের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল দেহটি। তিনি আসলে বেহালার বাসিন্দা। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসাবে কর্মরত ছিলেন ওই চিকিৎসক। মাত্র ৩২ বছর বয়স। লজ থেকে তাঁর দেহ উদ্ধারের জেরে স্বাভাবিকভাবেই রহস্য দানা বেঁধেছিল।
তবে দেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল একটি সিরিঞ্জ। প্রাথমিকভাবে দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে সিরিঞ্জ দিয়ে তিনি শরীরের মধ্যে এমন কিছু ভরে দিয়েছিলেন যার জেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। আর তিনি নিজে ছিলেন অ্যানাস্থেশিস্ট। সেক্ষেত্রে কোন মাত্রায় ওষুধ শিরায় দিলে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে, মৃত্যুর কোলে ধীরে ধীরে ঢলে পড়তে পারেন তা নিয়ে হয়তো তিনি ভালোই জানতেন। সেকারণেই তিনি হয়তো ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এমন কিছু শরীরে দিয়েছিলেন যার জেরে মৃত্যু হয় তাঁর।
তবে ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তাঁর দেহ ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে এটা খুনের ঘটনা নয়। তিনি হয়তো এমন কিছু সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়েছিলেন শরীরে যার জেরে তাঁর মৃত্যু তরাণ্বিত হয়েছিল। তবে পুলিশ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
কিন্তু কেন এই মৃত্যু? মনের কোণে কোথায় জমা হয়েছিল অবসাদ?
মৃত্যুর আগে দীপ্র মেসেজে লিখেছিলেন, নোংরা পৃথিবী, অবিচার নোংরামি দেখেও অন্ধ হয়ে থাকে সবাই। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? এ কোন দুনিয়ায় বাস করছি আমরা? ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না, জেগে থাকতে ইচ্ছে করে না, চারিদিকে খালি অন্ধকার।
একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন চিকিৎসক দীপ্র! তাতে লেখা ছিল, 'আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি। পুরনো ক্ষত থেকে বেরোতে পারলাম না। আমি ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলাম। বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তুমি মুভ অন করে যাও। তুমি কাঁদবে না, নতুন করে জীবন শুরু করো।'
তিনি আরজি করের আন্দোলনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছিলেন মেসেজে। তবে সম্পর্কের টানাপোড়েন নাকি অন্য কিছু, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।