পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তার জেরে খেতের ফসল পচে যাচ্ছে। এখন বাজারে শস্য–সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে কোজাগরি লক্ষ্মী পুজো। চাষবাসের ক্ষতি হয়ে যাওয়ায় বাজার করতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের। বন্যার জেরে বহু জায়গায় আমন–আউশ ধানের চাষই করা যায়নি। সুতরাং আগামীদিনে কমবে চালের জোগান। বাড়বে চালের দাম। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়েছে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ১০৬ টাকার উপর হওয়ায়। ডিজেল দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরির মুখে। যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাজারদরে। আজ, সন্ধ্যা নামলেই ঘরে ঘরে শুরু হবে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। আর এখন সবজি থেকে ফল—সবই চলে গিয়েছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
এদিকে বিঘা বিঘা জমি নাগাড়ে বৃষ্টিতে জলের তলায় চলে গিয়েছে। বীজ নষ্ট হওয়ায় দেরিতে চাষ শুরু হয়। কিন্তু তাতে ধানে পোকা লেগে যায়। তাই নতুন করে আবার বীজ রোপণ করতে হয় সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। তাতেও রক্ষা মেলেনি। কারণ প্রবল বর্ষণ ক্ষতিকরে দিয়েছে। একইসঙ্গে ডিভিসির ছাড়া জলে প্রবল ক্ষতি হয়েছে। মানিকতলা, হাতিবাগান, যদুবাবু, গড়িয়াহাট কিংবা লেক মার্কেট—কলকাতার বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ের বাইরে।
কতটা চড়া বাজারদর? বাজার ঘুরে দেখা গেল, পিঁয়াজ, পটল, কুমড়ো, ঢেঁড়শ, শশা, বেগুন–সহ বিভিন্ন সবজির দাম কোথাও দেড়গুণ, কোথাও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম কেজি প্রতি ৮০–১০০ টাকা, পটল বিকোচ্ছে ৬০ টাকায়। একমাত্র আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কুমড়োর দাম খানিকটা নাগালের মধ্যেই রয়েছে। ফল কিনতে গিয়ে হাত পুড়ছে গৃহস্থের। কলকাতায় আপেলের দাম ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। পেয়ারার কেজি ৮০ টাকার নীচে নয়। পানিফলও ১০০ টাকা কিলো! নারকেল বিকোচ্ছে প্রতি পিস ৪০–৬০ টাকা, কলা ৬০ টাকা ডজন, শশার কেজি ৬০ টাকা।
এদিকে কৃষকরা বলছেন, এই নষ্ট জমিতে আর ধান হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। ধানের শিসে যে তরল থাকে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফুলগুলিকে নষ্ট হয়েছে। সঙ্গে পোকা লেগেছে। ১ বিঘা জমিতে যেখানে ১২ থেকে ১৪ মন ধান হয়। সেখানে বড় জোর ৮ থেকে ১০ মন ধান হতে পারে এবার। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে ফুলের বাজারেও চড়া দাম। জগন্নাথ ঘাটের পাইকারি বাজরের রেট বলছে, রজনীগন্ধা কেজি পিছু ২৮০ টাকা, পদ্ম বিকোচ্ছে ১৫ টাকা পিস, দোপাটি ১০০ টাকা কেজি, গাঁদা কেজি প্রতি ৪০ টাকা, গাঁদা মালা ঝুড়ি প্রতি ১৫০ টাকা, গোলাপের হাজার পিস ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মেদিনীপুর থেকে বহরমপুর, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান–সহ দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্রই সবজি কিনতে গিয়ে হাত পুড়ছে আমজনতার।