রাস্তায় পড়ে রইল অসংখ্য কাগজ। কোনওটা সংবাদপত্র, কোনওটা আবার চাকরি সংক্রান্ত কাগজ। সেই কাগজের উপর দিয়ে হেঁটেই মধ্যরাতে ২০১৪ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন তুলে দিল পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ধাপে-ধাপে পুলিশের বাসে তোলা হয়। অসুস্থদের তোলা হয় অ্যাম্বুলেন্সে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই সল্টলেকের করুণময়ীতে আশঙ্কার কালো মেঘ জমতে শুরু করেছিল। চারিদিকে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল (কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশ দিয়েছিল, করুণাময়ীতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করতে হবে)। যে ভয়টা ছিল, ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ১২ টা পেরোতে ঠিক সেটাই হল। প্রাথমিকভাবে মাইকিং করে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। কিন্তু অনড় ছিলেন আন্দোলনকারীরা। তারপরই ‘অ্যাকশন’ শুরু করে পুলিশ। রাত ১২ টা ৩০ মিনিট নাগাদ চ্যাংদোলা করে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হতে থাকে।
আরও পড়ুন: যা বলার ব্রাত্য বলবে, আমি কালীপুজোয় যাচ্ছি, টেট বিক্ষোভ নিয়ে বললেন মমতা
প্রায় ৬২ ঘণ্টা অনশন করা ক্লান্ত শরীরগুলো তখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। বলপ্রয়োগ করে চাকরিপ্রার্থীদের বাসে তুলতে থাকে পুলিশ। তিনটি বাসে তাঁদের টেনেহিঁচড়ে তোলা হয়। বাস থেকেই অনেকে স্লোগান দিতে থাকেন। তারইমধ্যে যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলে পুলিশ।
মেরেকেটে ২০ মিনিটের 'অ্যাকশনে' ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তা। সেই জনশূন্য রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে কাগজ। তা থেকে উঁকি মারতে থাকে একাধিক নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনগুলো থেকে যেন আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল, 'আমাদের চাকরি বেচে রাতের অন্ধকারে পুলিশ দিয়ে জোর করে তুলে দিচ্ছে', ‘আমরা কি চোর?’
যদিও এক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেন, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বেআইনিভাবে জমায়েত করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেজন্য আটক করা হয়েছে। তবে কার নির্দেশে মধ্যরাতে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের তুলে দিল এবং ‘অ্যাকশন’ নিল, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ওই পুলিশ আধিকারিক। তাঁর সাফাই, যা বলার, তা উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বলবেন।
কেন অনশন শুরু করেছিলেন ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীরা?
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনশনের মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা রাখি কোলে জানিয়েছিলেন, তাঁদের ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছিল। কয়েকজনের কাউন্সেলিং হলেও বাকিদের হয়নি। তারইমধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ১৬,৫০০ শূন্যপদে নিয়োগ হবে। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিআই) মাধ্যমে জানা যায় যে ১৩,০০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। সেটাও কতটা স্বচ্ছভাবে হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
তবে ওই ১৩,০০০ শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে বলে ধরে নিলেও প্রায় ৪,০০০ পদ ফাঁকা আছে বলে জানান রাখি। তিনি জানান, সেই ৪,০০০ শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেটা করেনি। সংখ্যাতত্ত্ব সাজিয়ে বিভ্রান্ত করা হতে থাকে। উলটে আবারও ইন্টারভিউ দিতে বলছে পর্ষদ। তাঁর প্রশ্ন, ‘কেন ফের ইন্টারভিউ দেব আমরা? আমাদের তো ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। এবার তো নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া বাকি আছে।’
রাখি জানিয়েছেন, সদুত্তর চেয়ে গত সোমবার পর্ষদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি। তৎক্ষণাৎ আন্দোলন শুরু করা হয়। প্রথমদিন আন্দোলন করা হয়েছিল। পরদিন থেকে নির্জলা অনশন শুরু করা বলে জানিয়েছিলেন রাখি।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ সফরের শেষে টেটের আন্দোলন নিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টেটের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কিছু বলব না আমি। কারণ এই বিষয়টা নিয়ে আমি কিছু জানি না। এই বিষয়টা নিয়ে সরকারের তরফে ব্রাত্যকে (শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু( কথা বলার অধিকার দেওয়া হয়েছে। যা বলার ও বলবে।’