শুধু চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গেই নয়, নিজের ভাই – ভ্রাতৃবধূ ও বন্ধুদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন মানিক ভট্টাচার্য। চার্জশিটে এমনই দাবি করেছে ইডি। চলতি সপ্তাহেই কলকাতার বিশেষ আদালতে মানিক-সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছেন ইডির গোয়েন্দারা। তাতে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। ওই চার্জশিটে নাম রয়েছে মানিকের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্য ও মানিকের স্ত্রীরও।
চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে কখনও আত্মীয় বন্ধুদের দিয়ে জোর করে নথিতে সই করিয়েছেন মানিক। কখনও আবার তাদের সই জাল করেছেন। তার পর সেই অ্যাকাউন্টগুলি দিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তিনি।
এক্ষেত্রে উঠে এসেছে মানিকের ২ ভাই তাঁদের স্ত্রী ও এক বন্ধুর নাম। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মানিকের এক ভাইয়ের স্ত্রীর নামে একটি সরকারি ব্যাঙ্কে ৬টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল ২৭ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা তোলা হয়। ৬টি অ্যাকাউন্টে এখনো রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। এই টাকার উৎস জানতে মানিকের ভাইয়ের স্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। অ্যাকাউন্টের নথি দেখে অবাক হয়ে যান ভদ্রমহিলা। তিনি জানান, এই সব অ্যাকাউন্টের কিছুই জানা নেই তাঁর। এর পর তিনি বলেন, ২০১০ সালে মানিক ভট্টাচার্য পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার নামে তাঁর স্বামীর কাছে নথি চান। তখন প্যান কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো নথি মানিককে দেন তাঁরা। এর পর পাসপোর্টের আবেদনের জন্য তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে যান মানিক। সেই নথি ও সই দিয়েই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে অনুমান।
তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর ও তাঁর স্বামীর একটি ব্যাঙ্কে যৌথ খাতা ছিল। সেই খাতার যাবতীয় নথি জোর করে নিয়ে নেন মানিক। কিছু একটা গোলমাল আছে বুঝতে পেরে সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তাঁরা। মহিলা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে খোলা ৬টি অ্যাকাউন্টের কোনওটিতেই কোনও লেনদেন করেননি তিনি।
মানিকের আরেক ভাইয়ের স্ত্রী ইডিকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে শৌভিক ভট্টাচার্যের একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করেন সৌভিক ও মানিক। সেই অ্যাকাউন্টের কোনও তথ্য নেই তাঁর কাছে।
মানিকের এক বন্ধু ইডিকে জানিয়েছেন, একদিন তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি ব্যাঙ্কের শাখায় নিয়ে যান মানিক। সেখানে কার্যত জোর করে একটি নথিতে সই করানো হয় তাঁকে। পরে তিনি জানতে পারেন, ওই সই ব্যবহার করে শৌভিকের সঙ্গে তাঁর ৪টি যৌথ আমানতি খাতা খোলা হয়েছে। তবে সেই অ্যাকাউন্ট কোনও দিন ব্যবহার করেননি তিনি।