দু'দিন আগেই নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, চিকিৎসকরা নাকি পুলিশের চিকিৎসা করছে না। টালা থানার প্রাক্তন ওসি-কে নিয়েই কথাটা বলেছিলেন মমতা। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য দাবি করেছিল, জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্যই রাজ্যে গত ১ মাসে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই সবের মাঝেই গতকাল গভীর রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে দেখা গেল এক মানবিক দৃশ্য। এমনিতেই এই আন্দোলনের আবহে ডাক্তার ও পুলিশ মুখোমুখি। কোনও সংঘর্ষ না হলেও ডাক্তারদের গলায় প্রতিনিয়ত শোনা গিয়েছে পুলিশ বিরোধী স্লোগান। এই সবের মাঝেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া এক কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে নাকি সুস্থ করে তোলেন আন্দোলনকারীরা। (আরও পড়ুন: 'ব, খ, গ… কিন্তু জানি', নিজের 'গালির স্টক' নিয়ে রোদ্দুর রায়কে চ্যালেঞ্জ কুণালের)
আরও পড়ুন: 'দিদিমণির কোলে বিনীত গোয়েল দোলে', আরজি কর আন্দোলনের মাঝে বিস্ফোরক সুকান্ত
আরও পড়ুন: একের পর এক 'ফোল্ডার', সত্যি সন্দীপের ল্যাপটপ থেকে মিলেছে নাকি 'ওসব'?
এসএসকেএম-এর রেসিডেন্ট ডিএম বীপ্রেশ চক্রবর্তীর বরাত দিয়ে অভিনেত্রী সুদিপ্তা চক্রবর্তী একটি ফেসবুক পোস্ট করেন গতকাল। সেখানে লেখা, 'আজ রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিবাদ স্থলে বিধাননগর পুলিশের একজন মহিলা পুলিশ কর্মীর তীব্র হাঁপানি শুরু হয়। ক্রমেই হাঁপানির তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট অনুভব করেছিলেন। প্রতিবাদী ডাক্তাররা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পরীক্ষা করে দেখেন। তার সাথে ইনহেলার ছিল না। আমি উন্মত্তভাবে স্লোগানকারী ভিড়ের দিকে দৌড়ে গেলাম। মাইক ধরলাম এবং একটি LABA+ স্টেরয়েড সংমিশ্রণ ইনহেলার চাইলাম। একজন দেবদূতের মতো ভিড় থেকে হাত বাড়িয়ে ইনহেলার দিলেন। আমি এত তাড়াহুড়ো করছিলাম যে তাঁর মুখও দেখতে পাইনি। আমি আবার দৌড়ে গেলাম তাঁকে ইনহেলার দিতে। আমাদের একজন জুনিয়র নিজেই পুলিশ কর্মীর ডোজ ঠিক করে দিয়েছিলেন। তিনি কিছুটা ভালো বোধ করতে শুরু করেছিলেন। এদিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমাদের দুই রেসিডেন্ট তাঁকে নিয়ে কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। উপস্থিত সিনিয়র পুলিশ অফিসার আমার কাছে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন, 'ধন্যবাদ। তোমরা না থাকলে ওকে বাঁচানো মুশকিল ছিল। আবারও ধন্যবাদ।' আমরা যাই করি না কেন, দিন শেষে আমরা শুধু ডাক্তার।' (আরও পড়ুন: সিজার তালিকা বলছে 'আছে', পোস্টমর্টেম বলল 'নেই', রহস্য নির্যাতিতার পোশাক নিয়ে)
আরও পড়ুন: বাস চালকদের সঙ্গে ডাক্তারদের 'তুলনা' দেবাংশুর! বিতর্কিত পোস্ট তৃণমূল নেতার
এর আগে অবশ্য নবান্ন থেকে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, জুনিয়র চিকিৎসকরা ডিউটি না করায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁদের বদলে সিনিয়র চিকিৎসকরা দ্বিগুণ কষ্ট করে সব দায়িত্ব সামলে নিচ্ছেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ৬ লাখ রোগী নাকি এই সময়কালে চিকিৎসা পাননি। যদিও জায়গায় জায়গায় অভয়া ক্লিনিক চালু করা হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি কোন্নগরের এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সেখানে আবার 'জাস্টিস ফর কোন্নগর' স্লোগান উঠেছে। কোন্নগর কাণ্ডে অভিযোগ উঠেছে, কোন্নগরের বেঙ্গল ফাইন মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন যুবক বিক্রম ভট্টাচার্য। বিবেক নগর দ্বারিক জঙ্গল বাই লেনে মা ও দিদিমার সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন বিক্রম। শুক্রবার তাঁর দুই পায়ের উপর দিয়ে লরি চলে যায়। প্রথমে শ্রীরামপুর হাসপাতালে এবং পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নাকি বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে এরপরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের সুপার দাবি করেন, বিক্রম ভট্টাচার্য নামে ওই যুবককে আরজি কর মেডিক্যালে রেফার করাই হয়নি। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। যদিও দাবি করা হচ্ছে, আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন যুবক। তার পর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আরজি করের এমএসভিপি। তিনি জানান, চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি রয়েছ তাদের কাছে।