ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের বৌবাজারের জোড়া সুড়ঙ্গ খননের কাজ মিটেছে ঠিকই । তবে কিছুতেই বিপদ পিছু ছাড়ছে না-ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের।এবার সুড়ঙ্গে চাপা পড়া টিবিএম মেশিন ‘চণ্ডী’কে বার করতে করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের।
কেএমআরসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সুড়ঙ্গের মধ্যে টিবিএম মেশিন চণ্ডী ফেঁসে রয়েছে, অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানকার মাটির চরিত্র বদল হয়েছে। ফলে, কংক্রিটের আস্তরণের নীচে চাপা পড়া টিবিএম মেশিন বার করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড় হয়েছে মেট্রো প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থার।
আরও একটি বড়সড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেটা হল, দুর্ঘটনাবশত কংক্রিটের আস্তরণে মুড়ে যাওয়া টিবিএমকে বার করতে গিয়ে মাটির চাপ পড়ে একটি সুরঙ্গ অন্যটির উপর হেলে পড়ছে। তবে কোনওমতে সেটা লোহার খাঁচা বসিয়ে ঠেঁস দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কার পাশাপাশি আদৌ সময়মতো এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এক আধিকারিকের কথায়, ‘ ওই অংশের মাটির চরিত্র এইভাবে বদলে যাবে, তা আগে থেকে কেউ আঁচ করতে পারিনি। সেক্ষেত্রে এই অদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।’
২০২৯ সালের ৩১ অগস্ট এই এলাকায় খননের কাজ করতে গিয়ে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল মেট্রো প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থা।সুড়ঙ্গের মধ্যে খননের কাজ করার সময় ভূগর্ভস্থ জলের স্রোতে মাটি ধুয়ে গিয়েছিল। সে কারণে বৌবাজার এলাকার একের পর এক পুরনো বাড়ি ধসে পড়ে। ভয়ানক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রকল্পের পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে বসানো ওই টিবিএম মেশিন চণ্ডীকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়।
সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সেখানেই চণ্ডীর সমাধি হয়ে যায়। তারপরে জলের স্রোত আটকানোর জন্য যেখানে টিবিএম মেশিন আটকে ছিল, সেখানে তরল কংক্রিট ও রাসায়নিকের মিশ্রণ তৈরি করে তা পাইপের সাহায্যে ওই গহবরে ঢোকানো হয়। তখনকার মতো সুড়ঙ্গের ওই অংশে তরল এই মিশ্রণ ঢুকিয়ে গর্ত ভরতি করে দেওয়া হয়। কংক্রিটের তরল শুকিয়ে যাওয়ার পর দুর্ঘটনাকবলিত ওই অংশের মাটি স্থিতিশীল হয়।
এরপর গত বছরের অক্টোবর মাসে শিয়ালদহ পর্যন্ত পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ করে অপর টিবিএম মেশিন উর্বি। তবে চলতি বছরের শুরুতে শিয়ালদহে বসানো উর্বিকে খননের জন্য সেখান থেকে তুলে এনে পশ্চিম দিকের সুড়ঙ্গে বসানো হয়। সেই কাজও কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে। শুধু বাকি ছিল, চণ্ডিকে উদ্ধার করে শিয়ালদহ ও এসপ্ল্যানেডের পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের মাঝের অংশ জোড়া লাগানোর কাজ। বিপত্তি বাধে সেখানেই।
মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত অংশ যেখানে কংক্রিটের তরল মিশ্রণ দিয়ে গহবরের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই মিশ্রণ চুঁইয়ে চণ্ডীকে কংক্রিটের আস্তরণ মুড়ে ফেলেছে। এবার চণ্ডীকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। চণ্ডীকে তুলে আনার জন্য পূর্বমুখী সুড়ঙ্গে যে গর্ত খোঁড়া হয়েছে, সেটি মাটির চাপে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের দিকে হেলে পড়ছে।
মেট্রো সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে থাকলেও যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন মেট্রো আধিকারিকরা। তবে সুরঙ্গ হেলে পড়া আটকাতে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গে লোহার খাঁচা বসিয়ে ঠেঁস দেওয়া হয়েছে। এখন কংক্রিটের চত্বর ভেঙে চণ্ডীকে সেখান থেকে বার করাই মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। এই কাজ করতে আরও বেশ কয়েক মাস গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করছেন মেট্রো আধিকারিকরা।