যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারিত হলেন রাজন্যা হালদার। তাঁর জায়গায় আনা হল কিশলয় রায়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আর জি কর কাণ্ডের আবহে শর্ট ফিল্মে অভিনয় এবং দলের চরম বিরোধিতা করে সেই ছবি প্রকাশে অনড় থাকার ফলেই এই পদ খোয়াতে হল রাজন্যাকে।
রাজন্যা হালদার প্রথম নজর কাড়েন ২০২১ সালে। সেবছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর 'জ্বালাময়ী' ভাষণ নজর কেড়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। যার জেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের অন্দরে রাজন্যা গুরুত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট প্রেসিডেন্টের পদ প্রাপ্তিও সেই অগ্রগতিরই প্রতীক ছিল।
নিউজ এইটিন বাংলায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, শুধুমাত্র রাজন্যা হালদার নন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পুরো ইউনিটেই বিস্তর রদবদল করা হয়েছে। যেমন - সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তন্ময় প্রামাণিক, ফিরোজ আলি লস্কর, এবং সায়ক চক্রবর্তীকে।
আমিনুল ইসলাম মোল্লা, তীর্থরাজ বর্ধনকে করা হয়েছে নয়া সাধারণ সম্পাদক। সম্পাদকের দায়িত্বে আনা হয়েছে শেখ সাহিল, শাহওয়াজ খান, অন্তরা দাস, সোমনাথ সর্দার, উদিতা পাল, রাজ অর্জন সিং এবং ঋতম দত্তকে।
অন্যদিকে, কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়েছে কুতুবুদ্দিন বদ্যি, ঈশিতা সরকার, রূপসা রায়, সানা মণ্ডল এবং সৃজিতা বড়ুয়াকে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যাদবপুর ইউনিটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন অমিত কুমার মণ্ডল।
দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পুরনো ইউনিট ভেঙে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন দায়িত্বে আনা হয়েছে নতুন মুখ।
প্রসঙ্গত, রাজন্যা হালদার এবং তাঁর এত দিনের দলীয় সহকর্মী প্রান্তিক চক্রবর্তীকে নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জোর জল্পনা চলছিল। কিছু দিন আগেও প্রান্তিক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে, রাজন্যা দলের যাদবপুর ইউনিটের সভানেত্রী হওয়ার পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদও সামলাতেন। কিন্তু, শর্ট ফিল্ম সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে দু'জনকেই সাসপেন্ড হতে হয়।
উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডের আবহেই হঠাৎ চর্চায় আসে রাজন্যা-প্রান্তিক জুটি। জানা যায়, প্রান্তিকের তৈরি একটি শর্ট ফিল্মের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজন্যা। নানা মহলে দাবি করা হয়, এই ছবির কাহিনি আদতে আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত!
বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে এভাবে ছবি বানানোর ফলে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। এমনকী, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও এই ছবির বিরোধিতা করা হয়। সেসব উপেক্ষা করেই ছবি রিলিজের প্রশ্নে অনড় থাকেন রাজন্যা ও প্রান্তিক। যার জেলের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়।
এদিকে, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি চলাকালীন নির্যাতিতার অভিভাবকদের তরফ থেকেও এই ছবি নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়। ছবি রিলিজ যাতে আটকানো হয়, সেই আবেদনও করেন তাঁদের আইনজীবী।
শীর্ষ আদালত তার পর্যবেক্ষণে ছবি রিলিজ আটকাতে যথাযথ পদক্ষেপ করার পক্ষে নির্দেশ দেয়। চারিদিকে এই বিপুল চাপের মুখে শেষমেশ পিছু হঠতে বাধ্য হন রাজন্যা ও প্রান্তিক। তাঁরা জানান, তাঁদের ছবির মুক্তি আপাতত স্থগিত থাকবে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার যাদবপুরে নয়া ইউনিট ঘোষণা করে এবং সভানেত্রীর পদ থেকে রাজন্যাকে অপসারিত করে, সংগঠনের তরফে তাঁকে কঠোরতম বার্তা দেওয়া হল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।