বুধবারের (১১ ডিসেম্বর, ২০২৪) বিকেল। ঘড়িতে সময় চারটে কি সোয়া চারটে হবে। হঠাৎই, বিপর্যস্ত কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ রুটের পরিষেবা।
কারণ? মেট্রো রেল সূত্রেই জানা গিয়েছিল, এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে নাকি ফের মরণঝাঁপ মেরেছেন কোনও এক যাত্রী। যার জেরে প্রায় আধঘণ্টা ধরে ব্যাহত হয় পরিষেবা।
সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবার যে যুবক মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ মেরেছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তিনি নাকি আদতে নিজে থেকে লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েননি, তাঁকে লাইনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল!
মেট্রো সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই যুবক রাজস্থানের বাসিন্দা। বুধবারের ঘটনায় তিনি গুরুতর জখম হলেও প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে তিনি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁকে লাইনে ধাক্কা মেরে ফেলা হয়েছিল। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁর এই দাবি মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, ওই যুবক আসলে আত্মহত্যার চেষ্টাই করেছিলেন।
কলকাতা পুলিশকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ যে খবর সামনে এসেছে, সেই অনুসারে, আহত ওই যুবকের নাম মহম্মদ দানিশ। ২৬ বছরের দানিশ রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা।
তিনি তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল, তখনই কোনও এক সহযাত্রী তাঁকে ধাক্কা মারেন এবং তার জেরেই তিনি লাইনের উপর পড়ে যান। এই ঘটনার পর দানিশকে উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ ও যান চলাচল) রূপেশ কুমার এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুধবার 'বিকেল সোয়া চারটে নাগাদ কলকাতা মেট্রোর এসপ্ল্য়ানেড স্টেশনে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন জয়পুরের ইন্দ্রজ্যোতি নগরের বাসিন্দা মহম্মদ দানিশ। তিনি প্ল্য়াটফর্ম থেকে রেললাইনে পড়ে যান।...'
'...তাঁর দাবি, তাঁকে অন্য কোনও যাত্রী ধাক্কা মেরেছিলেন। এই দুর্ঘটনায় তাঁর পায়ে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। কারণ, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যখন দমদমগামী একটি ট্রেন ঢুকছিল, তখনই তিনি লাইনে পড়ে যান। দুর্ঘটনার পর তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা তাঁর সঙ্গে হাসপাতালেই আছেন। নিউ মার্কেট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।'
ইতিমধ্যেই মহম্মদ দানিশের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সেই সময়ে প্ল্যাটফর্মের ওই অংশে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এমনটা হতেই পারে যে ঘটনার সময় প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত ভিড় থাকায় ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। এবং তার জেরেই মহম্মদ দানিশ প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইনে পড়ে যান।
আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকে। একেবারে ঢোকার মুখে ট্রেনের গতি তখন মারাত্মক। ফলত, গুরুতর জখম হন ওই যুবক।
কিন্তু, পুলিশ এইসব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে অটল রয়েছে। তাদের দাবি, ওই যুবক আত্মহত্যাই করতে গিয়েছিলেন।
মেট্রো রেলের সিপিআরও রাকেশ কুমার জানিয়েছেন, 'আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, সেই অনুসারে - ওই যাত্রী এসপ্ল্যানেড স্টেশনে দমদমগামী ট্রেন ঢুকতেই তার সামনে ঝাঁপ মেরেছিলেন। ওই যাত্রীকে উদ্ধার করতে সঙ্গে সঙ্গে লাইনে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরিষেবা স্বাভাবিক হয় বিকেল ৪টে বেজে ৪২ মিনিটে।'