সামান্য আঘাতে ভেঙে যাচ্ছিল শরীরের হাড়। যারফলে গত চার বছর ধরে দুচিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়েছে রোগীকে। কী কারণে এরকম হচ্ছিল তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। অবশেষে জানা গেল, টিউমারের কারণেই এমনটা হচ্ছে। টিউমার থেকে রোগীর যে ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল তা বিরল বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। শেষে অস্ত্রোপচার করে টিউমার কেটে বাদ দিয়ে রোগীকে সারিয়ে তুলল কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
ওই রোগীর নাম মমতাজ-উল হক পৈলান। তিনি মগরাহাটের বাসিন্দা। গত ২৫ মার্চ তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে শল্য বিভাগের ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি ইউনিটে অস্ত্রোপচার করে তার টিউমার বাদ দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার বছর ধরে রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু, কোথাও সমস্যার সমাধান হয়নি। শেষে কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বারস্থ হন। ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, 'ওই ব্যক্তির শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকলেও ফসফেটের মাত্রা নেমে গিয়েছিল। সেই কারণেই তার হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল।'
‘ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি’ ইউনিটের ইন-চার্জ, চিকিত্সক ধৃতিমান মৈত্র জানান, ‘ওই ব্যক্তির শরীরে অত্যধিক হারে এফজিএফ-২৩ নামক এক প্রোটিন জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছিল। সাধারণত প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি অধিক সক্রিয় থাকলে প্যারাথাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।’ তবে ওই ব্যক্তির প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু, ওই প্রোটিন জাতীয় পদার্থ ৬০ ইউনিট থাকার কথা থাকলেও তা ছিল ১৩৬০ ইউনিট। সেই কারণেই হাড়ে ফসফেটের মাত্রা নেমে গিয়েছিল।
তবে কোথা থেকে এই প্রোটিন জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছিল তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। শেষে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে সিটিস্ক্যান করিয়ে অবশেষে ডান দিকের চোয়ালে টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন সেই টিউমার থেকেই এই পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছিল। গত সোমবার সেই টিউমার সহ চোয়ালের কিছু অংশ কেটে বাদ দেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে ওই রোগী সুস্থ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।