শীতের সকালে লুচি আর আলুর দম দিয়ে জলখাবার, কিংবা ছুটির দিনে দুপুরের পাতে ধোঁয়া ওঠা মাংসের ঝোলের সঙ্গে পেল্লায় সাউজের আলুর টুকরো - আহা! আলুর এমন আকর্ষণ বাঙালি এড়ায় কী করে? কিন্তু, এড়াতে হচ্ছে। কারণ, বাজারে আলু ছুঁলেই 'ছ্যাঁকা খেতে হচ্ছে' মধ্যবিত্তকে। ফলত, রান্নার সময়েও বিভিন্ন পদে আলুর ব্যবহার খানিক রয়েসয়েই করছেন গৃহিণীরা।
কিন্তু, কেন এই অবস্থা? আলু ব্যবসায়ীরা তো নিজেরাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যের গুদামগুলি থেকে ২৬ টাকা প্রতি কেজি দরে পাইকারদের আলু বিক্রি করা হবে। তাতে খুচরো বাজারে আলুর দাম কিছুটা হলেও নাগালে আসার কথা। কিন্তু, তেমনটা তো হচ্ছে না!
কারণ, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও রাজ্যে বিভিন্ন স্টোর থেকে ২৯-৩০ টাকা প্রতি কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের। এ নিয়ে ইতিমধ্য়েই সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি শুরু হলেও ব্যবসায়ীদের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
এমনকী, কী কারণে এতটা বেশি দামে স্টোর থেকে আলু ছাড়া হচ্ছে, তারও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রশাসন এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট টাস্ক ফোর্সের তরফে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, তাতে আখেরে লাভ কি কিছু হচ্ছে?
কোথায় আলুর দর কেমন?
শহর কলকাতার বিভিন্ন খুচরো বাজারের মধ্যে আলুর দামে সামান্য ফারাক থাকলেও একটা গড় হিসাব ধরে বলা যায়, জ্যোতি আলু ৩৬-৩৮ টাকা প্রতি কেজি এবং চন্দ্রমুখী ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়া, জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদে জ্যোতি ৩৬ টাকা কেজি ও চন্দ্রমুখী ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের খুচরো বাজারে জ্যোতি আলু কেজি প্রতি ২৮-৩০ টাকা ও চন্দ্রমুখী ৩৮-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়াতেও আলুর দাম প্রায় সমান।
দুই বর্ধমানে জ্যোতি আলু ৩০-৩৪ টাকা কেজি দরে এবং চন্দ্রমুখী ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নদিয়ায় চন্দ্রমুখীর দর কেজিতে ৪৫-৫০ টাকা। হেমাঙ্গিনী ৪০ টাকা, জ্যোতি আলু ৩০ টাকা কেজি এবং নতুন আলু ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের বহু বাজারেই চন্দ্রমুখীর দেখা পাওয়া যায়নি। নতুন জ্যোতি আলু সেখানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি এবং পুরোনো জ্যোতি আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
আলুর দাম এখনও কমছে না কেন?
রাজ্য টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলেকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, গত দু’দিনে পঞ্জাব থেকে নতুন আলু রাজ্যে ঢুকেছে। পাইকারিতে এই আলুর দাম ২২ টাকা কেজি। সেক্ষেত্রে খুচরো বাজারে সেই আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী পঞ্জাবের পুরোনো আলু বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তাছাড়া, রাজ্য়ের ব্যবসায়ীরা স্টোর থেকে আলু ছাড়ার ক্ষেত্রে কম দাম নেওয়ার যে প্রতিশ্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করেছিলেন, তাও পালন করছেন না বলে অভিযোগ করছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। অর্থাৎ - আলুর বর্ধিত দামের জন্য কার্যত ব্যবসায়ীদের একাংশের ঘাড়েই দায় চাপাচ্ছেন তাঁরা।