শহর কলকাতার মাটি তৈরি হয়েছে মূলত নদী ও সমুদ্রের পলি জমাট বেঁধে। তাই এই মাটি নরম। ফলত, বাড়ি তৈরি করার সময়েই যদি সতর্ক ও সচেতন না হওয়া হয়, এবং ভালোমানের নির্মাণ সামগ্রী সঠিক পরিমাণে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে যেকোনও বহুতল, এমনকী কম উচ্চতার বাড়িও হেলে পড়তে পারে! একথা মানছেন খোদ কলকাতা পুরনিগমের কর্মী-আধিকারিকরাই।
এই সময়-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কলকাতার বাঘাযতীনে চারতলা বাড়ি হেলে পড়ার পর এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তৎপর হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুরনিগমের তরফে স্থির করা হয়েছে, এবার থেকে শহরের পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন সাব-অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ররা।
তাঁরা যদি দেখেন, কোনও বাড়ি বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়েছে, তাহলে বিষয়টি পুরনিগমের গোচরে আনা হবে। এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়রদের দিয়ে সেই বাড়ি পর্যবেক্ষণ করানো হবে। কিন্তু তারপর কী করা হবে? সেইসব হেলে পড়া বাড়ি কি সোজা করে দেবে পুর কর্তৃপক্ষ?
পুরনিগমের বক্তব্য হল, এক্ষেত্রে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়রা যেমনটা বলবেন, তেমনটাই করা হবে। কিন্তু, সমস্যা হল - সাধারণত এই সমস্ত হেলে পড়া বাড়ি 'হাইড্রলিক জ্যাকিং প্রযুক্তি'র মাধ্যমে সোজা করা হয়। অথচ, কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমের কাছে মেনে নিয়েছেন, তাঁরা এই প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহাল নন!
কলকাতা পুরনিগমের বর্তমান ও প্রাক্তন আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত হাইড্রলিক জ্যাকিং প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু, কলকাতা পুরনিগমে এমন কোনও বিশেষজ্ঞ নেই, যিনি আপতকালীন পরিস্থিতিতে এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তাহলে উপায় কী? কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকের বক্তব্য, এক্ষেত্রে প্রয়োজনের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য ও পরামর্শ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাই যদি হবে, তাহলে এত দিন সেসব করা হয়নি কেন? কারণ, কলকাতায় এই মুহূর্তে শহরের নানা প্রান্তে অসংখ্য বাড়ি হেলে রয়েছে! সেইসব বাড়িতে মানুষ বসবাস করছে। দোকান, বাজার চলছে। এই উদাসীনতা যে কতখানি বিপজ্জনক হতে পারে, বাঘাযতীন কাণ্ডে তার কিছুটা আঁচ অবশ্যই পাওয়া গিয়েছে।
শেক্সপীয়র সরণী ও জওহরলাল নেহরু রোডের ক্রসিং, মোমিনপুর, গুরুসদয় রোড ও বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ক্রসিং, তপসিয়া-সহ বহু এলাকায় হেলে পড়া বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও অজানা।