আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর প্রায় পাঁচমাস হতে চলল। এমন একটা সময় এই ঘটনা নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত যেসমস্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে - কোনও একটি 'বিশেষ মহল' নাকি এই বিষয়ে আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে। আর এক্ষেত্রে তারা হাতিয়ার করছে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্ট।
অভিযোগ, পুরোনো কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্টকে হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এনে, সেটিকেই নতুন বলে দাবি করা হচ্ছে। আর এতেই নানা মহলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
ঘটনা হল, আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃত সঞ্জয় রায়কেই এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চার্জশিট পেশ করেছে তারা। সেই চার্জশিট পেশ করা হয় গত অক্টোবর মাসে।
সিবিআইয়ের গঠন করা এই চার্জশিটের ভিত্তিতে শিয়ালদহ এডিজে আদালতে সঞ্জয়কে মূল অভিযুক্ত করে আরজি কর কাণ্ডে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত নভেম্বর মাস থেকে। আগামী ২ জানুয়ারি থেকে মামলার পরবর্তী শুনানি পর্ব শুরু হওয়ার কথা। ওই সময় থেকেই সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের আইনজীবীরা তাঁদের সওয়াল শুরু করবেন।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর এই সওয়াল-জবাব পর্ব শেষ হলেই আরজি কর কাণ্ডে রায় ঘোষণা করতে পারেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক।
এক্ষেত্রে রুদ্ধদ্বার এই শুনানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ হল, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্ট। যে রিপোর্ট অনেক আগেই (১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল এবং সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেও একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই কাঠগড়ায় তোলা যায় বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
এদিক, গত সোমবার রাতে আবার নতুন করে সেই পুরোনো রিপোর্টে 'প্রকাশ্য়ে' আনা হয় বলে অভিযোগ। সংবাদ প্রতিদিন - এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এভাবে পুরোনো রিপোর্ট নতুন করে সামনে আনার নেপথ্যে রয়েছে কোনও এক 'বিশেষ মহল'!
এর ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, আরজি করের ঘটনায় ধর্ষণ ও খুন কি আদৌ চারতলার সেমিনার রুমে হয়েছিল? নাকি নির্যাতিতাকে অন্য কোথাও ধর্ষণ ও খুন করে তাঁর দেহ সেমিনার হলে ফেলে যাওয়া হয়েছিল?
উল্লেখ্য, এই প্রশ্ন কিন্তু নতুন নয়। আগেও এই প্রশ্ন উঠেছে এবং তার পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক যুক্ত, তত্ত্ব পেশ করা হয়েছে। কিন্তু সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্টে এই প্রশ্নের উত্তর যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কী সেটা?
নির্যাতিতার দেহ পাওয়া গিয়েছিল, চারতলার সেমিনার রুমে একটি তোষকের উপর। কিন্তু, ওই ঘরে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন ছিল না। এবং সেমিনার হলের অন্য কোথাও রক্ত বা অন্য কোনও জৈবিক সূত্র ছিল না। এই কারণেই প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি সেমিনার রুম ঘটনাস্থল নয়? সেটি শুধু দেহ ফেলে যাওয়ার জায়গা?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আদালতে ইতিমধ্যেই এর জবাব দিয়েছে সিবিআই। তাদের যুক্তি, ঘুমন্ত অবস্থায় নির্যাতিতার উপর হামলা হয়েছিল। তাতে তাঁর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করেছিলেন।
সিবিআইয়ের বক্তব্য, সেই সময় সঞ্জয় নির্যাযিতার মুখ চেপে ধরে এবং তাঁর মাথা সজোরে কাঠের স্টেজে ঠুকে দেয়। ফলত, নির্যাতিতার মুখে সঞ্জয়ের আঙুলের চাপে কালশিটে পড়ে যায় এবং তাঁর মাথায় আঘাত লাগে।
যেহেতু নির্যাতিতা সেই সময় ম্য়াট্রেস বা তোষকের উপর ছিলেন, তাই নির্যাতনের ফলে যে রক্তপাত বা জৈবিক উপাদানের নিসঃরণ ঘটেছিল, সেটা ওই তোষকের বাইরে কোথাও পড়েনি। এবং নির্যাতিতা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় বাধা দেওয়ার সুযোগও পাননি।
এর ফলেই নাকি সেমিনার রুমে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন বা ঘরের অন্য কোথাও রক্ত কিংবা অন্য কোনও জৈবিক নমুনা পাওয়া যায়নি।
এখানে আরও যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যেহেতু সেমিনার রুমে ঢোকা-বের হওয়ার পথে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল, তাই সেই নজরদারি এড়িয়ে কারও পক্ষেই একটি মৃতদেহ বয়ে এনে সেমিনার রুমে রেখে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এবং সেই ক্যামেরায় কেবলমাত্র সঞ্জয় রায়েরই আসা-যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, এই প্রেক্ষাপটে আদালতে শুনানির পরবর্তী পর্বগুলি দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আবহে পুরোনো কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্টকে কেন আবার 'সর্বসমক্ষে' আনা হল এবং সেটিকে 'নতুন' বলে চালানোর চেষ্টা করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর পিছনে ওই 'বিশেষ মহল'-এর কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।