পাক্কা দু'মাস আগের একটি ঘটনা। যা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল সংবাদমাধ্যম। অভিযোগ ছিল, তোলা দিতে রাজি না হওয়ায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা তথা এলাকার কাউন্সিলর ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের হাতে মার খেয়ে রক্তাক্ত হতে হয় কলকাতা লাগোয়া বিধাননগরের এক প্রোমোটারকে। সেই ঘটনায় গত দু'মাস ধরে 'বিস্তর চেষ্টা' করেও পুলিশ অভিযুক্ত কাউন্সিলরের টিকিটিও খুঁজে পায়নি! অথচ রবিবার খবর এল, সেই 'নিখোঁজ' কাউন্সিলরই নাকি বেমালুম জামিন পেয়ে গিয়েছেন!
যে কীর্তিমান কাউন্সিলরকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি বিধাননগর পুরনিগমের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সমরেশ চক্রবর্তী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি কিশোর হালদার নামে এক প্রোমোটারের কাছে ৩০ লক্ষ টাকা তোলা দাবি করেন! খুব স্বাভাবিকভাবেই এই বেয়াড়া আবদার মানেননি কিশোর।
তাঁর দাবি, ৩০ লক্ষ টাকা তোলা দিতে অস্বীকার করাতেই তাঁর উপর হামলা চালান সমরেশ ও তাঁর বাহিনী। ওই প্রোমোটারকে আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে মাথায় মারার অভিযোগ ওঠে। যার ফলে তাঁর মাথা ফেটে যায়। ঘটনাটি ঘটে ঠিক দু'মাস আগে - ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর - বাগুইআটিতে।
এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কিশোর। ঘটনা সংবাদমাধ্যমে চাউর হতেই হইচই শুরু হয়ে যায়। আর, তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান সমরেশ। পুলিশ গত ১৭ ডিসেম্বর সমরেশের খোঁজে তাঁর বাড়িতে যায়। সেখানে নোটিশও সাঁটিয়ে আসে। তাতে নির্দেশ ছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনায় পুলিশের কাছে পৌঁছে তাদের তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে সমরেশকে।
কিন্তু, কীর্তিমান কাউন্সিলর সেসবের ধার ধারেননি। এরপর সমরেশের সন্ধানে মন্দারমণি থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ, এমনকী ভিনরাজ্যেও পুলিশ অভিযান চালায় বলে প্রশাসনের দাবি। কিন্তু, সেই অভিযানে নীট ফল - শূন্য!
এই প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যম সূত্রে যে তথ্য সামনে এল, তা হচ্ছে - শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) - অর্থাৎ, প্রোমোটার পেটানোর ঘটনার ঠিক দু'মাসের মাথায় গোপনে জামিন পেয়ে গিয়েছেন অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর সমরেশ চক্রবর্তী-সহ অভিযুক্ত চারজন।
এই খবর পাওয়ার পর স্বভাবতই হতাশ আক্রান্ত প্রোমোটার কিশোর হালদার। তাঁকে উদ্ধৃত করে টিভি নাইন বাংলা পোর্টলে লেখা হয়েছে, 'আমি গত দু'মাসে পুলিশের কাছে মিনিমাম ৫০ বার গিয়েছি। প্রতিবারই পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে, ধরা পড়বে। হাইকোর্টে মামলা করবে। হাইকোর্টও তাই নির্দেশ দিয়েছে। আসলে পুলিশ ধরেইনি ওঁকে (অভিযুক্ত কাউন্সিলকে)। আইনশৃঙ্খলা বলে কী রয়েছে, সেটা তো বুঝতেই পারছেন। প্রভাবশালীর হাত মাথায় রয়েছে বলেই ধরেনি পুলিশ। না হলে তো পুলিশের ট্রান্সফার হয়ে যাবে।'
প্রায় একই সুরে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করছেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, একজন অভিযুক্তকে প্রায় ৬০ দিন ধরেও খুঁজে পেল না পুলিশ! তাহলে করলটা কী?
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দুর্নীতির ত্রিভূজে তৃণমূল শিবিরে একে অপরের পরিপূরক। পুলিশ তৃণমূলের বোঝাপড়ায় বিচার চাইলে পাবেন না, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।'