যৌন পাচার চক্র থেকে উদ্ধার হওয়া নাবালিকার জন্য ৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করল কলকাতার জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্র (ডিএলএসএ), যা এ যাবৎ রাজ্যে সর্বোচ্চ।
অন্তর্বর্তী বিচার অভিযান মিশনের অন্তর্গত আইনি সমাধান বিভাগের অধিকর্তা সপ্তর্ষি বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘পুলিশ, আদালত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এই ক্ষতিপূরণ। যৌনপল্লিতে শিশু পাচার চক্রের প্রায় অবসান ঘটানো, ওই পল্লিতে শিশুদের যৌন নির্যাতনকারী গ্রাহকদের দোষী চিহ্নিত করা, সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ প্রদানের মতো উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের কাজে আমরা খুশি। যৌন অপরাধ রোধে এই পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গকে আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আশা করি বাংলার দেখানো পথ বাকি রাজ্যগুলিও অনুসরণ করবে, যাতে যৌন পাচার চক্র, অবৈধ শ্রমের মতো অপরাধ প্রশমিত হবে।’
২০১৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ওড়িশা থেকে যৌন পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে ওই কিশোরীকে বিক্রি করা হয়। ওই বছরের ৭ মে তাকে সোনাগাছি থেকে উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশের মানব পাচার দমন বিভাগ। ঘটনায় এক নাবালক-সহ তিন জন গ্রেফতার হয়। তবে মামলায় পকসো আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা ছাড়াই চার্জ শিট আদালতে জমা পড়ে।
মামলায় অনুসন্ধানকারী সংস্থা এবং আইনজীবীদের সাহায্য করে আন্তর্জাতিক বিচার মিশনের কলকাতা শাখা। তদন্তকারী আধিকারিক সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি ও মামলা সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্য নিজ উদ্যোগে তৈরি করেন। এর পর মামলাটি কলকাতার নির্ধারিত পকসো আদালত অর্থাৎ দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারকের এজলাসে ওঠে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় বিচারক নিয়োগ না করা পর্যন্ত মামলার কাজ এগোয় না।
প্রায় একই সময়ে ২০১৮ সালে যৌন পাচারের শিকারদের জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন মঞ্জুর করে কলকাতা হাই কোর্ট। ঘটনার সময় ১৪ বছরের কম বয়স থাকায় এই রায়ের ভিত্তিতে কিশোরীর জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর করে ডিএলএসএ কলকাতা, যাতে ৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আবেদনে শিলমোহর দেয় ক্রিমিনাল ইনজুরিস কম্পেনসেশন বোর্ড।
এই নির্দেশের রায় শুনে কেঁদে ফেলে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ওই নির্যাতিতা। ক্ষতিপূরণের টাকায় উচ্চ শিক্ষা ও নিজের বাড়ি তৈরির কথা জানাতে সে দ্বিধাবোধ করেনি।