এর আগে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও এবং হাথরসের ঘটনায় তদন্ত করেছিলেন সিবিআইয়ের অফিসার সীমা পাহুজা। আর আদালতে এই মামলা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন অনুরাগ মোদী। আরজি কর মামলাতেও তাঁরাই জুটি বেঁধেছিলেন। তবে এই ক্ষেত্রে সাফল্য হয় আংশিক। আদালতে সিবিআই দাবি করেছিল, এই অপরাধ বিরলের থেকে বিরলতম। তবে শিয়ালদা আদালতের বিচারক সেই দাবি মানেননি। এই আবহে সিবিআইয়ের দাবি মেনে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেননি বিচারক। তার বদলে সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে। এই আবহে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী। এর আগেও আরজি কর নির্যাতিতার পরিবার সিবিআই তদন্তে 'অনাস্থা' প্রকাশ করেছিলেন। এদিকে সিবিআইয়ের তদন্তের পরেও আজি কর মামলায় একাধিক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে বলে দাবি করছেন আন্দোলনকারী থেকে নির্যাতিতার পরিবার।
আজ আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন বিচারক অনির্বাণ দাস। এর আগে গত শনিবার আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে আজ বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে।
এর আগে আরজি করের খুনের ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই ক্ষেত্রে গ্রেফতার করা হয়েছিল টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে সাপলিমেন্টারি চার্জশিটও দিতে পারেনি সিবিআই। এই আবহে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এদিকে আজ রায় ঘোষণার আগেও নির্যাতিতার মা-বাবা অভিযোগ করেন, তাঁদের মেয়ের সঙ্গে যে চার জন চিকিৎসক ছিলেন, তাঁদের অভিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন তাঁরা। তবে সিবিআই তাঁদের কীভাবে জেরা করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এদিকে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরও সিবিআই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ফরেন্সিক মেডিসিন, স্ত্রীরোগ, অস্থি, শল্য ও চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মোট ১১ জন ছিলেন সেই দলে। সেই বোর্ডের তরফ থেকেই নাকি সিবিআইয়ের কাছে একটি রিপোর্ট গিয়েছিল। যাতে দাবি করা হয়েছে, নির্যাতিতা ডাক্তারের যৌনাঙ্গে ভোঁতা বস্তু প্রবেশ করানো হয়ে থাকতে পারে। এদিকে মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে দাবি করা হয়, নির্যাতিতার দেহে বীর্য পাওয়া যায়নি। তবে যে সাদা ঘন চটচটে তরল পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল নির্যাতিতার দেহ থেকে, তা কী? সেই জবাব মেলার আগেই অবশ্য শনিবার দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সঞ্জয় রায়কে। দাবি করা হয়েছে, সেই পদার্থ কী, তা জানতে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করার জন্যে নমুনা পাঠানো হয়েছিল সিএফএসএলে। তবে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও জবাব আসার আগেই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা সম্পন্ন হয়েছে। ঘোষণা হয়েছে সাজা। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই-এর তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।