সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে দোষপ্রমাণের ক্ষেত্রে ধনঞ্জয় মামলার উদাহরণ দিল শিয়ালদা আদালত। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ারকে দোষীসাব্যস্ত করার জন্য যেহেতু পারিপার্শ্বিক প্রমাণের উপরে নির্ভর করতে হয়েছে, তাই তথ্যপ্রমাণে একটি ‘শৃঙ্খল’ তৈরি হওয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝানোর ক্ষেত্রে ধনঞ্জয় মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। যে ধনঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদা আদালত।
পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ক্ষেত্রে ‘চেন’ গুরুত্বপূর্ণ, বলল আদালত
রায়ের কপিতে শিয়ালদা আদালতের বিচারক জানিয়েছেন, এটা ঠিক যে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনে মামলা পারিপার্শ্বিক প্রমাণের উপরে নির্ভর করছে। আর পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে যদি কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হয়, তাহলে যে প্রমাণের প্রয়োজন হয়, সেটায় কোনও ফাঁক থাকা যায় না। সেইসব ঘটনার ক্ষেত্রে প্রমাণের যে শৃঙ্খল (চেন) থাকে, সেটা সম্পূর্ণ করতে হয়, যাতে কোনওরকম ধন্দ না থাকে।
সেই রেশ ধরেই দুটি মামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক। ১৯৮৪ সালের শরদ বিরধি চাঁদ সারদা বনাম মহারাষ্ট্র সরকার এবং ১৯৯৪ সালের ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মামলার কথা বলেছেন। বিচারক জানিয়েছেন, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ কতটা অকাট্য হতে হয়, সে বিষয়ে ওই দুটি মামলায় শীর্ষ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছেন।
প্রমাণের ‘চেন’-এ সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত!
আর সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে সেই পারিপার্শ্বিক প্রমাণের শৃঙ্খল সম্পূর্ণ হয়েছে বলেও জানিয়েছে আদালত। রায়ের কপিতে বিচারক জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ, টাওয়ার লোকেশন, ডিএনএ বিশ্লেষণের মতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে অপরাধস্থলে ছিল সঞ্জয়। সেই বিষয়টি খারিজ করে দেওয়ার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার বিকল্প কোনও তথ্য দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে আদালত।
সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে প্রমাণের 'শৃঙ্খল'
১) যে রাস্তা দিয়ে অপরাধস্থলে (সেমিনার রুম) পৌঁঁছানো যায়, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজে শেষ সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছে।
২) ময়নাতদন্ত, সুরতহালের মতো বিভিন্ন রিপোর্টে নির্যাতিতা চিকিৎসকের মৃত্যু এবং তাঁর যৌনাঙ্গ জোর করে কিছু প্রবেশ করানোর বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
৩) স্তনবৃন্ত এবং চুলের ক্ষেত্রে ডিএনএ নমুনা মিলে গিয়েছে। সঞ্জয়ের পোশাকে নির্যাতিতার রক্তও মিলেছে।
৪) সঞ্জয়ের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে সে আরজি কর হাসপাতাব চত্বরেই ছিল।
৫) সিবিআই প্রমাণ করে দিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল, সে যে আসলে সঞ্জয়, সেটা স্বীকার করে নিয়েছে প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার।
৬) বয়ান রেকর্ডের সময় ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা দিচ্ছিল সঞ্জয়।