ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার আদালতে গিয়েছে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবিতে। সিবিআইও গিয়েছে উচ্চ আদালতে। এই সবের মাঝেই শিয়ালদা আদালতের বিচারপতি অনির্বাণ দাসের ১৭২ পাতার রায়ের কপি হাতে এসেছে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়ের। এই সেই রায়ের কপি নিয়েই নাকি জেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। সঞ্জয় বলছে, সে ইংরেজি বোঝে না, তাই তাকে কেউ যেন বাংলায় সেই রায়ের কথা বুঝিয়ে বলে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি জেলে ঘুম থেকে উঠেই বেশ কয়েকটি বাংলা এবং হিন্দি সংবদপত্র পড়ে সঞ্জয় রায়। এরপরই জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সে দরবার করে, কেউ যাতে তাকে রায়ের কথা বাংলায় বুঝিয়ে দেয়। এমনকী জেলের বিভিন্ন কয়েদির কাছেও নাকি দ্বারস্থ হয়েছিল সে। পরে তাকে জানানো হয়, জেলে আইনি সহায়তা ক্যাম্প হলে সেই সময় তার দাবি সহজেই মিটবে। (আরও পড়ুন: স্ত্রীকে খুন করে দেহ কেটে মাংস প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করেছি… স্বীকার করল স্বামী)
আরও পড়ুন: এবারের বাজেটে আয়করের নয়া স্ল্যাব আনতে পারে কেন্দ্র, মিলতে পারে ছাড়: রিপোর্ট
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়। (আরও পড়ুন: সেক্সে 'হ্যাঁ' মানে কি গোপন মুহূর্তের ভিডিয়ো করারও সম্মতি? কি বলল হাই কোর্ট?)
এদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি পকসো মামলায় আসামিদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইছিলেন অধিকাংশ মানুষ। এই মামলায় ফাঁসিক দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা। এই নিয়ে শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ, আদালতের দায়িত্ব মানুষের ভাবাবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলা। আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রেখে আদালতকে কাজ করতে হয়। বিচারক বলেছেন, 'আদালতকে অবশ্যই জনগণের চাপ বা মানবিক আবেদনের কাছে মাথানত করার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে হবে। বরং এমন একটা রায়দানের উপরে মনোনিবেশ করতে হবে, যা আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে পূরণ করে।'