রায়দানের আগে ২০ জানুয়ারি যে শুনানি হয়, সেই সময় বিচারক সঞ্জয় রায়কে কথা বলতে দিয়েছিলেন। সেই সময় সঞ্জয় দাবি করেছিল, সে নির্দোষ। তখনই ফের রুদ্রাক্ষের মালার কথা সে তুলে ধরেছিল। তখন বিচারক বলেছিলেন, তার কথা তুলে ধরতে আদলত তাকে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল এর আগে। জানা যাচ্ছে, সেই ‘তিন ঘণ্টার’ সময়কালেই বিচারকের প্রশ্নের জবাবে আইপিএস-দের নামে অভিযোগ করেছিল সঞ্জয় রায়। সেই সময় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়লকে নিয়েও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিল সঞ্জয়। এরই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পেশ করা বিভিন্ন প্রমাণের বিরুদ্ধে নিজের যুক্তিও দিয়েছিল সঞ্জয় রায়। (আরও পড়ুন: আরজি কর মামলায় আদালতের রায়ের কপি নিয়ে জেলে ঘুরছে সঞ্জয় রায়, বলছে...)
আরও পড়ুন: বিনীত গোয়েল নিজে… আদালতে বিচারকের প্রশ্নে বিস্ফোরক দাবি করেছিল সঞ্জয় রায়
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতে বিচারক ১০০-র ওপর প্রশ্ন করেছিলেন সঞ্জয় রায়কে। সেই প্রশ্নমালার ৩২ ও ৩৩ নম্বর প্রশ্ন ছিল বাজেয়াপ্ত হওয়া ব্লুটুথ, বায়োলজিকাল এভিডেন্সে থাকা সঞ্জয় রায়ের চুল, তাঁর দেহে থাকা ক্ষত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই সময়ই প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের 'যুক্তি' তুলে ধরেছিল সঞ্জয়। আদালতের প্রশ্নে দেহে ক্ষত থাকার বিষয়ে সঞ্জয় রায় দাবি করেছিল, কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের সালুয়ায় 'ক্লাইম্বিং' প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল সে। সেখানেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় পড়ে গিয়ে শরীরের নানা জায়গা ছড়ে যায়। সঞ্জয়ের অভিযোগ, সেই সব ক্ষতকেই ধর্ষণের ক্ষত বলে দাবি করা হয়েছিল। আর সেই ভোররাতে কেন ৪ তলায় গিয়েছিল সঞ্জয় রায়? কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার দাবি করে, অনুপ দত্তের নির্দেশেই ৮ অগস্ট সন্ধ্যায় এক রোগীর দেখাশোনার জন্য সে হাসপাতালে গিয়েছিল। তাঁকে খুঁজতেই ইমার্জেন্সি ভবনের তিন তলা ও চার তলায় ঘুরে ঘুরে ওই রোগীরই সে খোঁজ করেছিল। পরে মেডিসিনের পুরুষ ওয়ার্ডের একটি খালি বেডে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছিল সে। সঞ্জয়ের দাবি, সেখানেই সে ব্লুটুথ ইয়ারফোনটি ফেলে এসেছিল। পরে হাতে হেলমেট নিয়ে সঞ্জয় বেরিয়ে গিয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে। সেই মুহূর্তে সিসিটিভিতে ধরা পড়েছিল সঞ্জয়ের মুখ। সঞ্জয়ের অভিযোগ, পরে সেখান থেকেই ব্লুটুথ ইয়ারফোন নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে 'প্লান্ট' করা হয়ে থাকতে পারে। (আরও পড়ুন: ঢাকায় পাক ISI প্রধান! সফরের গোপনীয়তার কারণ ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে)
আরও পড়ুন: আসছে বদল, হাওড়া-এসপ্ল্যানেড রুটে মেট্রো চলাচল নিয়ে সামনে বড় সুখবর
এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, সঞ্জয় আদালতে জানিয়েছিল, গত ৯ অগস্ট তার গলায় ছিল একটি রুদ্রাক্ষের মালা। তবে গ্রেফতারির পর সেই মালা পুলিশ খুলে নিয়ে নেয়। আদালতে সাজা ঘোষণার সময়ও এই মালার উল্লেখ করেছিল সঞ্জয়। সঞ্জয়ের যুক্তি, যদি সে ধর্ষণ করত, তাহলে সেই মালা ছিঁড়ে যেত। এদিকে সঞ্জয় অভিযোগ করে, গ্রেফতারির পরে পুলিশ তাকে লকআপে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছিল। সেই সময় তার চুলের মুঠি ধরে মারা হয়েছিল। তখন সেখান থেকে তার চুল পুলিশের কাছে চলে এসে থাকতে পারে এবং পরে তা 'প্লান্ট' করে হতে পারে প্রমাণ হিসেবে। (আরও পড়ুন: স্ত্রীকে খুন করে দেহ কেটে মাংস প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করেছি… স্বীকার করল স্বামী)
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।