গতকালই আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তিনি জানান, আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয়কে। তিনি ফাঁসির রায় দেননি। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি জানিয়ে উচ্চ আদলাতে যাবে। এই আবহে আজই কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে মামলার আবেদন করা হল। (আরও পড়ুন: বিচারক মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ঠিক করেছেন,মত একদা আরজি কর মামলায় লড়া আইনজীবী বিকাশের)
আরও পড়ুন: আরজি কর নির্দেশনামায় পুলিশ ও সন্দীপকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ, একাধিক প্রশ্ন বিচারকের
রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ কলকাতা হাই কোর্টে দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বরের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে ট্রায়াল কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার। রাজ্যের হয়ে এই আবেদন দায়ের করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এই মামলার আবেদন গ্রহণও করেছে হাই কোর্ট। এই আবহে আগামীতে সঞ্জয় রায়ের সাজা সংক্রান্ত শুনানি হতে চলেছে কলকাতা হাই কোর্টে। (আরও পড়ুন: 'দুই দেশের মধ্যে গন্ডগোল বাধিয়ে...', বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে বিস্ফোরক মমতা)
উল্লেখ্য, গতকাল শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত শনিবার আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বললেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।
এদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি পকসো মামলায় আসামিদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইছিলেন অধিকাংশ মানুষ। এই মামলায় ফাঁসিক দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা। এই নিয়ে শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ, আদালতের দায়িত্ব মানুষের ভাবাবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলা। আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রেখে আদালতকে কাজ করতে হয়। বিচারক বলেছেন, ‘আদালতকে অবশ্যই জনগণের চাপ বা মানবিক আবেদনের কাছে মাথানত করার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে হবে। বরং এমন একটা রায়দানের উপরে মনোনিবেশ করতে হবে, যা আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে পূরণ করে।’